Wednesday 3 February 2016

শাহালাস্কুয়াস হোসাইন শাহাদাত : অনুপম শিল্পী এক সত্তরোর্ধ শিশু / ড. মোহাম্মদ আমীন

শাহালাস্কুয়াস হোসাইন শাহাদাত আমাদের অনেকের বন্ধু, অনেকের চেনা। আবার অনেকের ফেসবুক ফ্রেন্ড এবং ফেসবুক থেকে হার্টথ্রোব ফ্রেন্ড। গভীর রাতে ভরাট গলায় উদার হেসে সুদূর ফ্রান্স থেকে টেলিফোন করেন বিশাল সারল্যে : কেমন আছেন স্যার, ছেলে মেয়ে ভাবী? 
ভালো। 
আমি কিন্তু ভালো না। 
কেন?
আপনি আমার একটা পোস্টও অ্যাপ্রুভ করেন না। এত শত্রতামি  করেন কেন স্যার, বলেন তো? কী দোষ করেছি আপনার? এবার পোস্ট অনুমোদন করতেই হবে। করবেন তো?
এমন সারল্য আর বিরল শিশুমুগ্ধতার কোনো উত্তর দিতে পারি না। হেসেই যাই শুধু, এমন একজন বড় মাপের মানুষ, পরাবাস্তব শিল্পী ও সত্তরোর্ধ চিরন্তন শিশুর বিশাল সরলতার সামনে থেকে নিজেকে লুকানোর সবচেয়ে সহজ উপায় হেসে যাওয়া। এর চেয়ে সহজ কৌশল আমার জানা নেই। 

শাহালাস্কুয়াস হোসাইন শাহাদাত সত্তরোর্ধ শিশু। ঠিক শিশুর মতোই ধেয়ে বেড়ায় পৃথিবী, আকাশ, এপাড়-ওপাড়, মাটি এবং চারিপাশ। কবিতার মতো তার আবেশ, গানের মতো নিবেশ। তিনি গেয়ে
যান মনের মাধুরী মিশিয়ে স্বপ্নের মতো চারুলতায় বিপুল আবেগে পাখির মতো নিরাভরণ লাস্যে। তার বলার পথ, চলার রথ এবং হাসির গ- সব চিরচেনা শিশুর অমিয় দুরন্তপনার অবিরল রহস্য। তিনি শিশু নন, শিশুসুলভ, তাই তার সৃষ্টি অনেক পরিণত, অনেক গভীর, অনেক মজার। জটিলও বটে কখনো কখনো। তবে তার আদর-আদুরে ডাক এবং অভিমানী কলমের প্রাণবন্ত কালিতে ডুবে থাকা ভাষার সরল চাঞ্চল্য বুঝে নিতে পারলে হতভম্ব হয়ে যেতে হয়। এমন সাদামনের মানুষ পৃথিবীতে খুব কমই আছো। শাহালাস্কুয়াস হোসাইন শাহাদাত নিবিড় স্নেহে প্রকৃতির মতো অযত্নময় যত্নে প্রকৃতির হাতেই গড়ে উঠা এক গভীর রহস্য, নিবিড় অরন্য, রহস্য যার আনন্দ এবং  যে অরন্যকে এখনও ভেদ করা সম্ভব হয়নি কারও। প্রকৃতি তাকে জড়িয়ে রাখে সবুজে, কণ্টক কথকে, ফুল্ল ছন্দের বাতাসে, ঝড় আর ব্যাকুল প্রশান্তিতে। তবে খুঁজে নিতে হয় একাগ্রে, প্রেমের মতো সাদরে, ধর্ষনে নয়।

শাহালাস্কুয়াস হোসাইন শাহাদাত শিশু। ঢাকায় চারুকলার শিক্ষক ছিলেন তিনি। এখান থেকে পাড়ি দেন ফ্রান্স। এখন ফ্রান্সে থাকেন। শিশুদের বুঝতে হলে শুধু মনে হলে হয় না, মনের সঙ্গে থাকতে হয় ক্ষণ, ক্ষণের পিঠে লেপ্টে থাকা প্রেমবোধ। শিশুকে বুঝতে হলে যেমন প্রয়োজন স্নেহাদ্র ধৈর্য, প্রেমাদ্র
জ্ঞান আর বিনিদ্র সেবা, তেমনি শাহাদাতকে বুঝতে হলেও প্রয়োজন পিতৃত্বের নৈকট্যে মাতৃত্বের অনুপমতা। এগুলো অর্জন করা কঠিন, তার চেয়েও কঠিন লালন করা। তাই অধিকাংশ মানুষ শিশুকে বুঝতে পারে না, রাগ করে তাদের প্রতি। কিন্তু যখন বুঝতে পারে তখন কাঁদে, অনুতপ্ত হয়। শিশু প্রজাপতির মতো চঞ্চল, ঝড়ের মতো সবেগ, সে ধুলো উড়াবেই, কাঁচ ভাঙবেই, চড় মারবেই। শিশু সম্পূর্ণ তার নিজের, তার কাছে সবকিছু তুচ্ছ, আবার সবকিছু মহামূল্যবান। ধুলোকে মনে করে হীরা আর হীরাকে মনে করে তুচ্ছ ইটের টুকরো। তাই সে আগামীর চিরন্তনতায় প্রস্তুত হতে ইচ্ছেমতো নড়ে, ইচ্ছেমতো করে, করতে পারে। ইচ্ছেমতো কাদে, কারও নিষেধ শুনে না। এসব যদি না করে তো সে কিসের শিশু। এজন্য যদি কেউ শিশুর প্রতি বিরক্ত হয়, রাগে তো শিশুর চঞ্চলতা আস্তে আস্তে থেমে যায়। এতে শিশু নয়, বরং ক্ষতিগ্রস্ত হয় প্রকৃতি, আগামী প্রজন্ম।

শাহালাস্কুয়াস হোসাইন শাহাদাতের বেলাতেও অমন ঘটে। অনেকে ভুল বুঝেন সাহালাস্কুয়াসকে। তার
শিশুসুলভ মোহনীয়তাকে বুঝতে পারেন না কেউ কেউ। মনে করেন, উগ্রতা।আসলে এসব কোনো উগ্রতা নয়, তার শিশুমনের অভাবনীয় চঞ্চলতা। যারা বুঝতে পারেন, তাদের  চোখে ভালবাসায় জল এসে যায়। যারা বুঝতে পারেন না, তারা কষ্ট পান, রেগে যান। আসলে তিনি অনেক বড়মাপের একজন শিল্পী। যে যত বড় শিল্পী তিনি তত বড় শিশু। আমি সুলতানকে দেখেছি, ছফাকে দেখেছি - কত বড় মাপের শিল্পী ছিলেন দুজন। একজন তুলির আর একজন কলমের। রুদ্রকেও দেখেছি, তিনিও ছিলেন শিশুর মতো। তেমনি আর একজন শাহালাস্কুয়াস। শিশু হলেও তিনি অপরিমেয়; নিরেট হিমাদ্রী। হিমাদ্রি-শিশু, না শিশু-হিমাদ্রি এ প্রশ্ন অবান্তর, বলতে পারি তিনি বাংলাদেশের মানুষ এবং বিশ্বমানের একজন শিল্পী, চিত্রকর। মনের মাধুরী মিশিয়ে আঁকেন, বকেন আর কাঁপেন ও কাঁপান। তিনি কত সরল, কত নিষ্পাপ কত নিপাট এবং তার শিশুমন কত নরম- তা তার শিল্পকর্ম, আচরণ আর নিষ্পাপ কলহাস্যই প্রমাণ করে। তার শিল্পকর্ম বিদগ্ধ মনের খোড়াক, প্রেমের প্রহর, বিরহের নেশা;  তাই তার ছবিগুলোর রঙ হয়ে অশ্রুবিন্দুর মতো ঝরে পড়ে পাথর, বৃষ্টি, বরফ, কৃষ্টি আর সৃষ্টি এবং প্রেম-দ্রোহে আচ্ছাদিত মমতার নিকষ সারল্য।

একটু গভীর ভালবাসা নিয়ে শাহালাস্কুয়াসের দিকে তাকালে মুগ্ধ হয়ে যেতে হয়। তার সৃষ্টি অনেক উঁচু মাপের। আসলে কত বছর পর্যন্ত একজন মানুষ শিশু থাকে?  ষোলো, আঠারো - - -। ভিন্ন
আইনে ভিন্ন বয়স, দেশভেদেও ভিন্নতা আছে শিশুর, বয়সের। কিন্তু সত্তরোর্ধ বয়সের কোনো শিশু যখন নিষ্পাপ প্রগলভতায় শিশুর মতো উচ্ছল হয়ে ওঠে, তখন মনটা অদ্ভুদ অনুভূতিতে ভরে যায়।এমনটিই দেখা যায় শাহালাস্কুয়াস হোসাইন শাহাদাতে

4 comments:

  1. ""শুধু বলবো আপনি কি মানব শিশু মনোবিজ্ঞানি -তাও বুঝলাম অজানায় ,অন্যকে গভীর ও আন্তরিকায় উপস্হাপনায় সন্মানায় - আদরীয়তায় ও মনো রসবোধের মুল্যায়নে কৃতজ্ঞতায় শুধু আপনি ডঃ মোহাম্মদ আমিন ,আপনিই পারেন আমার মতন ষাট বয়সের শিশুকেও দীর্ঘদিনের মাতৃভাষা ভুলে যাওয়া শালাস্কো হোসেন শাহাদাত'কেও বর্নমালায় ছবি লিখনীতে নিয়ে এসেছেন অতি আদরীয় যত্নে ও ধৈর্য্যে =এতো আমার উপরি মাধ্যম আবিস্কার -সেতো আপনিই খুঁজে পান= ""মহৎ শিল্পীর গুনাবলীতে সম্পূর্ন ডঃ মোহাম্মদ আমিন =The Man Great ARTIST"ধন্যবাদ - নিজেকেও বুঝলাম - প্রাপ্ত বয়সকো আমার দুই ছেলে -পুর্ণ-দ্রাবীড় ও আর্য- ভিভিয়ান বিদায় বেলায় হাসতে হাসতে আমার দুই গালে চুমু দিয়ে বলে বাবা তুই আমাদের বাবাও ভুলে যাসনা - তবে বুড়ো শিশুও বটে , তাই সুন্দর থাকিস আজীবন এমন হাসি খুসী-ছবি আকার মতোন সতেজ -সরল, আমিন:::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::২০১৬""

    ReplyDelete
  2. This comment has been removed by the author.

    ReplyDelete
  3. নামের মতোই বিমূর্ত তাঁর ছবি আর এই বর্ণনার মতোই সরল তাঁর ফটো আর আকুতি। চমৎকার ভাবেই ফুটিয়ে তুলেছেন আমিন স্যার। একজন অন্য মানুষকে জানলাম। সুন্দর ও সরল।

    ReplyDelete
  4. শিল্পী ও কবি শাহালাস্কুয়াস হোসাইন শাহাদাত আমার ফেইসবুক বন্ধু। আটলান্টিকের ২ পারে থেকেও কথা হয়েছে বার দুয়েক। তার সারল্য ও ইগোবিবর্জিত উষ্ণতা আমাকে মুগ্ধ করেছে। তাকে নিয়ে আমিন স্যারের এই লেখাটি ভালো লেগেছে। তাদের দুজনের সুস্থ ও সুদীর্ঘ সৃজনশীল জীবন কামনা করছি।

    ReplyDelete