Monday 21 May 2018

বিশ্বকাপ ২০১৮ ফাইনাল খেলবে যারা / ড. মোহাম্মদ আমীন


আজ স্বপ্ন দেখলাম, স্বপ্ন দেখলাম জনদাবির পরিপ্রেক্ষিতে
বাংলাদেশের প্রতিটি বিভাগ, মূখ্যমন্ত্রীশাসিত রাজ্যে
প্রতিটি জেলা, বিভাগে
প্রতিটি উপজেলা, স্বয়সম্পূর্ণ জেলায়
প্রতিটি ইউনিয়ন, এক একটি উপজেলায়
প্রতিটি ওয়ার্ড, চেয়ারম্যানের আওতাধীন ইউনিয়নে
প্রতিটি পাড়া, মেম্বারের অধীন ওয়ার্ডে এবং বিশ্বাস করুন,
প্রতিটি বাড়ি আয়তন অনুপাতে কমিউনিটি সেন্টার, শপিং মল, মাঠ, বিল বা পুকুরে পরিণত হয়েছে। আমাদের গ্রামের বাড়িটা একটু বড়ো। দেখলাম অবাক হয়ে, এটি ফুটবলের মাঠ হয়ে গেছে। এত বড়ো বাড়িতে থাকব কীভাবে?
হায় হায়!
স্বপ্নরাজ জানাল, আগামী ১৫ই জুলাই, ২০১৮, রোববার রাত ৯টায় মস্কোতে বিশ্বকাপের যে ফাইনাল অনুষ্ঠানের কথা ছিল তা ওখানে হবে না।
কোথায় হবে?
ফুটবল মাঠের মতো বিশাল হয়ে যাওয়া তোমাদের চট্টগ্রামের চন্দনাইশের বাড়িতে অনুষ্ঠিত হবে। লোকজন বিশ্বকাপ ফাইনাল দেখার জন্য দলে দলে চট্টগ্রাম যাওয়া শুরু করেছে। তাই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ১২০ কিলোমিটার যানজট। ফাইনালের আগে এই জট কমবে না।
জানতে চাইলাম, ফাইনাল খেলবে কোন দুটি দেশ?
স্বপ্নরাজ বলল, দুই নয়, তিন দেশ একসঙ্গে খেলবে। বাংলাদেশের সঙ্গে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা একত্রে ফাইনাল খেলবে।
কীভাবে জানলে?
স্বপ্নরাজ বলল, বিশ্বকাপের অনেক বাকি। তারপরও তোমাদের দেশের যুবশক্তি যেভাবে ব্রাআ-ব্রাআ করছে তাতে সারা ফুটবল বিশ্ব ভয় পেয়ে কাঁপছে। তাদের ধারণা বাংলাদেশি এসব লোকেরা পাগল হয়ে গেছে। হুজুগে, অথর্ব, নিষ্কর্মা এবং ঐতিহ্যহীন কিছু কিছু বাংলাদেশি যেভাবে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা নিয়ে পরপূজকের মতো মস্তক অবনত করে যাচ্ছে তাতে মনে তাদের কোনো দেশ নেই, ভাষা নেই, ঐতিহ্য নেই, স্বকীয়তা নেই, কর্ম নেই, বিবেচনা, বই নেই, সাহিত্য নেই, সংস্কৃতি নেই।
তাহলে তাদের কী আছে?
পরনির্ভরশীল মন। তাদের অর্থহীন চিৎকারে বিশ্বের তাবৎ ফুটবল খেলোয়াড়দের হাত-পা অবশ হয়ে পড়েছে ভয়ে। তাদের কানের পর্দা ফেটে গেছে বাংলাদেশিদের ব্রাআ-ব্রাআ পাগলা চিৎকারে। বাংলাদেশিরা ল্যাটিন আমেরিকার যে দুটি দেশ নিয়ে এমন লজ্জাকর লাফালাফিতে উন্মাদ, বলা যায় সেই দেশদুটির প্রায় কোনো লোকই বাংলাদেশের নাম পর্যন্ত জানে না। দু-একজন হয়তো দাপ্তরিক প্রয়োজনে জানতে পারে।
স্বপ্নরাজকে বললাম, বাংলাদেশের সঙ্গে যদি ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার ফুটবল খেলা হয়, তাহলে বাংলাদেশিরা কেন বাংলাদেশের কথা না বলে ব্রাআ-ব্রাআ করছে?
স্বপ্নরাজ বলল, এদের দেশপ্রেম নেই। এরা মাতৃভাষাটাও ভালো জানে না।
তাই বাংলাদেশে জন্ম নিয়েও এদের আচরণ দেশদ্রোহী রাজাকারদের মতো
ভয়ংকর। মাইকেল মধুসূদনের ভাষায় তারা ‘পরধনলোভে মত্ত’। বিবেচনাশূন্য এসব বাংলাদেশিরা নিজের দেশের মাটির উপর দণ্ডায়মান ঘরের ছাদে, ভবনের শৃঙ্গে, বৃক্ষের শিখরে বিদেশের পতাকা ওড়ায়। এরা পুরোই ঐতিহ্যহীন, ছি! তোমার লজ্জা করে না এদের দেখে?
এরা ফুটবল প্রেমিক, লজ্জা করবে কেন?
এদের বুকে দেশপ্রেমের চিহ্নমাত্র নেই। তাই নিজের বুকে বিদেশি পতাকা লাগিয়ে গর্বভরে ঘুরে বেড়ায়। নিজের গায়ে বিদেশি নামাঙ্কিত জামা জড়িয়ে ঐতিহ্য ও স্বকীয়হীনতাকে আরো উগ্র করে তোলে। পৃথিবীর আর কোনো দেশে এমন বিদেশ-বন্দনা দেখা যায় না। যারা নিজের দেশ, ঐতিহ্য আর স্বকীয়তাকে অবহেলা করে অন্য দেশের পূজো-বন্দনায় আনত হয় তাদের দিয়ে দেশের কোনো কল্যাণ হতে পারে না।
ঠিক বলেছে স্বপ্নরাজ।জাতীয় দিবসেও বাংলাদেশিরা এত জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে না, বিশ্বকাপে যত বিদেশে পতাকা উত্তোলন করে। এমন হীনম্মন্য জাতি পৃথিবীতে আর নেই।
তাদের বোধোদয় হোক। কামনা করি, যেভাবে তারা বিদেশ-প্রেম ও বিদেশ-বন্দনায় উন্মাদ সেভাবে তারা যেন স্বদেশ-বন্দনায় রত হয়।
তাতে তোমার লাভ?
আমার প্রশ্নের উত্তরে স্বপ্নরাজ বলল, পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্ট সেই, যে নিজ দেশকে অবহেলা করে নিজের দেশে বসে পরদেশের বন্দনা করে। এরা আমার স্বপ্নকেও কুলষিত করে দিয়েছে। ছি বাঙালি ছি! 
এদের চিনব কীভাবে? খুব সহজ। এদের কেউ ব্রাআ পরে আবার কেউ ব্রাআ-ব্রাআ করে চিৎকার করে। আমাদের স্বপ্নরাজ্য হলে এসব কুলাঙ্গারদের গায়ে চিরদিনের জন্য ব্রাআ পরিয়ে দেওয়া হতো। তোমরা পারবে না। কারণ তোমাদের আত্মমর্যাদার খুব অভাব।যারা নিজেদের ঐতিহ্য নিয়ে হীনম্মন্যতায় ভোগে তাদের দেশপ্রেম কখনো খাঁটি হয় না।