রতন
সিদ্দিকী : অনুভবের বোদ্ধা, সংস্কৃতির কুসুম
রতন সিদ্দিকী, খুব
পরিচিত একটি নাম। দীর্ঘকাল হতে নামটির সঙ্গে আমার পরিচয়, তবে মানুষটির সঙ্গে নয়। ব্যক্তিগতভাবে পরিচয় হওয়ার
পূর্ব-পর্যন্ত অভিজ্ঞানের নির্মাল্য বস্তুত বাঙ্ময় প্রফুল্লতা, রঙময় সাহিত্যকর্ম
ও দিঙময়
শৈল্পিক প্রবারতায় সীমাবদ্ধ ছিল। নাম-পরিচিত, এ অপরিচিত মানুষটির সঙ্গে
পরিচয় হওয়ার পর আমার কাছে আর একটি বিশাল অভিধায় উৎফুল্ল হয়ে ওঠেন। কর্ম-প্রকৃতির
কারণে, রাষ্ট্রপ্রধান হতে শুরু করে খুব সাধারণ মানুষের সঙ্গেও গভীরভাবে মেলামেশার এবং খুব
নিকট থেকে অবলোকনের সুযোগ আমার হয়েছে। মানুষ আমার সাহিত্যকর্মের উপাদান, তাই যে
কোনো মানুষকে আমি গভীরভাবে নিরীক্ষণ করি। রতন
সিদ্দিকীর সঙ্গে পরিচিত হওয়ার পর পরই, তার মানবিক সম্পর্কের নিদাঘ অনুপমতার নিটোল একটা দিক আমার কাছে উন্মোচিত হয়। যা নিয়ে এতদিন আমি শুধু ভাবতাম, প্রত্যাশা করতাম, দেখতে চাইতাম
কিন্তু পেতাম না, দুর্লভ ছিল বড়। ব্যক্তিত্ব, ক্ষমতা বা অবস্থানের নানা অজুহাতে মানুষের
মাঝে অহংবোধ নামের মলের মতো দুর্গান্ধময়
এক জঞ্জাল তৈরি হয়, যে জঞ্জাল অতিক্রম করে মানুষে মানুষে নিবিড় সংযোগ স্থাপন করা
অনেকের পক্ষে সম্ভব হয় না। যা পক্ষান্তরে মানুষের পাশবতাকে পরিস্ফুট করে তুলে। অধিকাংশ মানুষেই এটি দেখতাম। তবে রতন
সিদ্দিকীর সঙ্গে পরিচয় এবং অল্পসময়ের মধ্যে ঘনিষ্টতা আমার এক নতুন অভিজ্ঞতার সূচনা ঘটায়।
আমি বুঝতে পারলাম অসংখ্য হীন ও নিকৃষ্ট কাজ করার পরও কেন মানুষ সৃষ্টির সেরা
জীব। মানুষের মাঝে রতন সিদ্দিকীদের মতো অনেক মানুষ আছেন, তাই মানুষ সৃষ্টির সেরা
জীব। মানব জাতির নৃশংসতাগুলো তারা বিমল
স্নিগ্ধতার পরম লালিত্যের প্রশান্ত সুরভিতে ঢেকে রাখে।
মেনে নেওয়ার মতো
প্রবল ধৈর্য ও সবল প্রয়োগ রতন সিদ্দিকীর ব্যক্তিগত চরিত্রের আর একটি উজ্জ্বল দিক।
পারিবারিক জীবনের মতো কর্মজীবনেও তিনি মেনে নেওয়া সংস্কৃতির নির্ঝর ধারক। যেখানেই
তিনি শিক্ষকতা করেছেন, চাকরি করেছেন- সেখানেই এ গুণটির জন্য প্রশংসতি হয়েছেন। এটি
আমার কথা নয়, বিভিন্ন জায়গায় কর্মকালীন তার সহকর্মীদের কথা। অবশ্য এজন্য তাকে কষ্টও
স্বীকার করতে হয়েছে প্রচুর। অনেকে তার ঔদার্যকে
দুর্বলতা ভেবে সুযোগ নিয়েছেন। তাতে
তিনি কষ্ট পেলেও রূষ্ট হননি। রাস্তার পাশে যে গাছটি কণ্টককীন এবং ছায়া দেয় তপ্ত-শ্রান্ত পথিককে- সেটাকেই বেশি আঘাত পেতে হয়। তবু সে কি ছায়া দেওয়া থামিয়ে দেয়? কণ্টকিত হয়? না। ছায়াময় কিন্তু কণ্টকহীন বৃক্ষের মতো বিশাল হৃদয়ের মানুষ রতন সিদ্দিকী। এমন আকাশসম বিশাল হৃদয়ে, কষ্টের সাগরও হারিয়ে যায়।
সামান্য কজন মানুষ তাকে কী কষ্ট দেবে! যত কষ্টই আসুক, সংস্কৃতিমনা, নাট্যপ্রেমি ও
অসাম্প্রদায়িক চরিত্রের বিরল মাধুর্যের অধিকারী এ মানুষটির উদার হাসির বিহ্বল সাগরে
নিমিষে হারিয়ে যায়- সব কষ্ট। পুরো পৃথিবীর সমস্ত অন্ধকার একত্রিত হলেও একটি প্রদীপের
আলোকে ঢেকে রাখতে পারে না। বরং অন্ধকার যত গাঢ় হয়, প্রদীপের ছোট্ট আলোটি তত বিকশিত
হয়। তেমনি বিকশি হন তিনি, রতন সিদ্দিকী; তাঁর হাসিতে এবং সংস্কৃতির বাঁশীতে, নাটকের উন্মন উন্মাদনায়।
রতন সিদ্দিকী বিশ্বাস করেন ঈর্ষা, অহমিকা, পরশ্রীকাতরতা প্রভৃতি মানুষের পাশবতার ঈন্ধন। শুধু কথায় নয়, তার আচার-আচরণ এবং ব্যবহারেও এর যথার্থ প্রয়োগ দেখা যায়। তিনি এমন একজন মানুষ, যার অন্তরে
প্রবাহিত বন্ধু-প্রতীম নিবিড় সখ্যতার বৈশাল্য আমাজান-প্রবল স্রোতের মতো প্রচণ্ড
গতিতে সকল ঈর্ষা, অহংবোধ আর পাশবতা ধুয়ে-মুছে তাকে অনুক্ষণ পরিষ্কার করে রেখে যায়। তাই তিনি থেকে
যান চিরশুভ্র এবং স্বগীয় আবহে নিনাদিত মনের নিষ্পাপ মানুষ হয়ে। হাসির সঙ্গে উদাত্ত কথার অনিমেষ আতিথেয়তায় তিনি মুহূর্তে
মুগ্ধ করে দিতে পারেন- যে কাউকে। আমি এমন বিরাট মনের আর সরল ছাপের বিরল মানুষ খুব কম দেখেছি। সবচেয়ে
আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, তার আচরণ আর অনুপম ব্যবহার। এসব তার পরিকল্পিত কিছু নয়, সম্পূর্ণ
স্বভাবজাত এবং অকৃত্রিম। মনের গহীন থেকে স্বতঃস্ফুর্তভাবে উঠে আসা প্রত্যয়। শুধু তিনি নন, তার সহধর্মিনী
ফাহমিদা হক কলির ক্ষেত্রের একই কথা প্রযোজ্য। আসলে যারা সাহিত্য-সংস্কৃতির মাঝে
ডুবে থাকেন, তাদেরকে পার্থিব কোনো মলিনতা স্পর্শ করতে পারেন না।
সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায়
রতন সিদ্দিকীর দীপ্তময় পদচারণা বিনিদ্র আগ্রহের নীরব সুনিদ্রার মতো স্বপ্নময়। পরিবেশনায়
তিনি অমিয়, বিনির্মাণে বৈচিত্র্যময় এবং পট পরিবর্তনে দারুণ কুশীলব। রতন সিদ্দিকী
বাগ্মী। তিনি
প্রাবন্ধিক, গাল্পিক, সমালোচক, সাহিত্য বিশ্লেষক এবং আভিধানিক। তবে
এগুলোর মাঝে যেটি সবচেয়ে আমি বেশি দেখি এবং আমাকে মোহিত করে বিমল শ্রদ্ধায় সেটি-
তার ব্যক্তিগত জীবনের সঙ্গে সাহিত্যকর্মের অবিচ্ছিন্নতা, সমিল-সততা আর প্রায়োগিক
নির্মাল্য। তার প্রাত্যহিক জীবনের প্রতিটি বেলা-অবেলা, চিন্তা-চেতনা, দৃষ্টিভঙ্গি,
সময়-অসময়, গ্রহণ-বর্জন সাহিত্যকর্মের অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ হয়ে ফুটে ওঠে। বিন্দুমাত্র
ফাঁক থাকে না, রাখতে পারেন না। রতন সিদ্দিকীকে বুঝলে তার সাহিত্যকর্ম এবং তার
সাহিত্যকর্ম পড়লে তাকে পুরো এবং আগাগোড়া চেনা হয়ে যায়। এমন জীবনধর্মী এবং কথা ও কাজে সৎ সাহিত্যিক
বাংলাদেশে আর কয়জন আছে আমি জানি না। ব্যক্তিগত চরিত্র আর প্রাত্যহিক কর্মের সঙ্গে সাহিত্যকের্মের
কোনো ফাঁক নেই বলে রতন সিদ্দিকীর প্রতিটি লেখা, প্রতিটি রচনা, প্রতিটি গ্রন্থ
প্রতিটি নাটক পাঠকের কাছে অনবদ্য উপদেশে আসীন হয়ে শিক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়।
তার সাহিত্যকর্মে আমি দেখি মানুষ, মানবতা, সারল্য, অমায়িকতা। আসলে তিনি
অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিভূষিত বিশাল মনের নিপাট একজন মানুষ।
যুক্তির প্রাধান্য
এবং গ্রহণের মানসিকতা রতন সিদ্দিকীর সাহিত্যকর্মের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক। ছোট ছোট
বাক্যে শব্দের কলকল আর ছলছল চঞ্চলতা তার দক্ষ হাতের যাদুকরী স্পর্শে পটুয়ার কলমের
পটুত্বে অনির্বাণ হয়ে ওঠে। এমন অভিনবত্ব দেখা যায় তার বক্তৃতায়। কোনোরূপ পূর্ব
প্রস্তুতি ছাড়াই যে কোনো বিষয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পাঠককে ধরে রাখতে পারেন স্বপ্নমগ্ন
সময়ের মতো। কোনদিকে চলে যায় এবং কীভাবে কেউ টের পাওয়ার আগে কথা শেষ হয়ে যায়।
শুধু অবশেষ থাকে তালিমুখরিত শ্রোতৃবৃন্দের অবাক দৃষ্টি, এত তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেল? এত তাড়াতাড়ি শেষ করে দিলেন স্যার? বক্তৃতায় উঠে এমন অনেক সুখকর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি তাকে হতে হয়েছে। এতই চমৎকার তার বক্তৃতা।
প্রবন্ধ মানে নাকি
প্রকৃষ্টবন্ধন। তো এ বন্ধন কার সঙ্গে- এ নিয়ে যতই মতভেদ থাকুক না কেন, প্রবন্ধ যে সাধারণত
কঠিন ও নিরস- সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তবে রতন সিদ্দিকীর প্রবন্ধের ‘প্রকৃষ্ট
বন্ধন’টা হয় পাঠকের সঙ্গে। সহজবোধ্য ভাষায় গল্পের মতো প্রবন্ধ চয়নে তার স্বকীয়তা
আসলেই মুগ্ধকর। কোনো কোনো প্রবন্ধ গল্পের মতোই আকৃষ্ট করে রাখে পাঠককে। প্রবন্ধে
তিনি গভীর অনুভবের অনুপুঙ্খ বিশ্লেষক, দূরদর্শী ভাবুক এবং সংস্কারপ্রত্যাশী
প্রজন্মের ত্রিমুখী মোহনায় ফুলে ওঠা বিস্তৃতি। তার প্রবন্ধে অতীতের বিস্তারে বর্তমানের
হাসি
অভিষ্যতের জন্য উৎফুল্ল হয়ে উঠে। তাই পাঠক বিমোহিত হয়ে পড়ে তার প্রবন্ধে,
বুঝাই যায় না- আসলে গল্প না প্রবন্ধ। অন্যদিকে, গল্প ও নাটকে তিনি আত্মভোলা বাউল, মন্দ্রিত প্রপাতে জীবনের শ্বাস, উত্থানের উল্লাস আর পতনের প্রদাহ এবং বর্ষাস্নাত সন্ধ্যায় নুপুরকণ্ঠী বসন। সাহিত্য সমালোচনায়? সাবলীল কথকের মতো মুখর আর দার্শনিকের মতোই ধীর।
‘তমোঘ্নের কবি মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান’, ‘হৃষিত নাট্যকার মমতাজ উদ্দিন’, ‘বাংলা
সাহিত্যের অনিবার্য সংকেত : মাইকেল থেকে
মানিক’, ‘অর্চিত অতীত’, ‘ঊনিশ শতকের বাংলা নাটক লোকউপখ্যান’, ‘কতিপয় নাট্যকৃতি’, ‘কালের
খেয়া’, ‘বারোয়ারি’ প্রভৃতি গবেষণা ও প্রবন্ধ গ্রন্থ পড়লে সহজে অনুধাবন করা যায়-
তিনি প্রবন্ধ রচনায় তার বাঙ্ময়তার মতোই নির্ঝর। এসব গ্রন্থে রতন সিদ্দিকী গবেষণা,
প্রবন্ধ ও সাহিত্য আলোচনার ক্ষেত্রকে স্বকীয় আদলে সার্বজনীন মগ্নতায় অভিভূত এক
নতুন আঙ্গিকে উপস্থাপন করেছেন। তিনি সাহিত্যের আলো, যুক্তির কুশীলব, অনুভবের
বোদ্ধা এবং সাহিত্যের কুসুম এবং সংস্কৃতির নুপুর।
রতন সিদ্দিকীর রচনা যেমন সহজ-সহজ সরল তেমন সাবলীল ও প্রাঞ্জল। ভাষা শৈলীর দিক থেকেও রচনায় রয়েছে বিবর্ধিত মাধুর্য এবং অন্তর্নিহিত অনুবোধ। লেখার সময় তিনি লিখে যান মনের আনন্দে এবং কোনো সচেতন
প্রয়াস ছাড়াই এ আনন্দে প্লাবিত হয় পাঠক। তিনি জানেন, অধিক কঠিন ভাষা রচনার সৌন্দর্যহানি ঘটাতে পারে এবং পাঠককে
করতে পারে পাঠবিমুখ। তাই তিনি প্রতিটি বাক্য নিজের মতো অনুপমতায় তুলে ধরেন সরল ভাষায় সহজবোধ্য অনুচয়নে।
আনন্দের সঙ্গে জ্ঞানার্জন তার রচনার আর
একটি বিশেষ দিক। যে লেখা থেকে পাঠক কিছু শিখতে পারে না, যে লেখা লেখা পড়ে মানবীয় অনুভূতির
সুকুমার প্রগলভতার সুষমিত
বিকাশ
জেগে উঠে না, সেগুলো রচনা নয়, বঞ্চনা। তিনি এ ব্যাপারে বেশ সচেতন, বেশ সতর্ক। তাই তার লেখা
পড়ে পাঠক কখনও বঞ্চিত হন না। তিনি লেখেন পাঠককে আনন্দ দেওয়ার জন্য, ভাবেন পাঠকের
অনুভূতিকে জাগ্রত করার কৌশল। তাই রতন সিদ্দিকীর লেখায় আনন্দ ও জ্ঞান- দুটো
সমমাত্রিক সরলতায় বিদ্যমান। সংগত কারণে শিশু থেকে বুড়ো-সবার কাছে তার লেখা, তার রচনা সমাদরে গ্রহণীয়।
রতন সিদ্দিকী দেশপ্রেমিক,
স্বাধীনতা তাঁর রক্তের ঋণ, দেশ নিঃশ্বাসের
অম্লজান। দুটোই অনিবার্য, দুটোই জীবনের গভীর ব্যাকুলতায় প্রতিনিয়ত উথলে উঠা আগামীর
স্বপ্নবিছানো বর্ণীল ছাদর। এখানে ব্যক্তির মুক্তি, জাতির অগ্রায়ণ এবং বিশ্বশান্তির
স্বরূপ নিহিত। তাই বুদ্ধি হওয়ার পর থেকে তিনি স্বাধীনতাকামী। ছাত্র জীবনেও তার এ
বোধ সহপাঠী ও অন্যান্যদের দৃষ্টি কেড়েছে। সত্য
কথা সবসময় বলা যায় না, অনেক বিপদ, অনেক যাতনা। সত্য বলার জন্য প্রচণ্ড সাহস, মার্ত্যণ্ড
আত্মবিশ্বাস, অনিমেষ সহনশীলতা এবং সর্বোপরি মননশীল আবেগে উদ্দীপ্ত থাকার চেতনা প্রয়োজন।
রতন সিদ্দিকীর এগুলো ছিল এবং আছে। তাই তার সাহিত্যকর্মে সাহস, আত্মবিশ্বাস, সহনশীলতা, মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তচিন্তা, অসাম্প্রদায়িকতা, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য আর মননশীল আবেগের অপূর্ব সমন্বয় পরিলক্ষিত হয়। যার এগুলো আছে তাঁর লেখায়-বলায় অধিক কিছুর প্রয়োজন হয় না। গন্তব্যের
অনুসন্ধান, একাত্তর ও একজন কুমারী, বারবণিতা প্রভৃতি উপন্যাসে মানুষ, দেশ, ধর্ম,
রাজনীতি, প্রাত্যহিক সাংঘর্ষিকতায় জীবনের মাধুর্য নিপুণ ভাষায় পরিস্ফুট। বিশে
চৈত্রের সকালে, গৃহবৈরী প্রভৃতি তার গল্প এবং টমের কথা, ফেল্টুস ভাই, রিনির স্যার,
মডেল স্কুলের মানিক প্রভৃতি শিশুতোষ সাহিত্য। প্রমিত বাংলা উচ্চারণ অভিধান ও প্রমিত
বাংলা বানান অভিধান বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে বহুল পাঠ্য দুটি গ্রন্থ। নাটক রচনাতেও তিনি সিদ্ধহস্ত। বৌবসন্তি, রতন সিদ্দিকীর একটি
উল্লেখযোগ্য নাটক।
সমকালীন
জীবনবোধ, আর্থ-সামাজিক ও রাজনীতিক প্রেক্ষপটের সঙ্গে সঙ্গে মানব জীবনের জটিল অনুভূতির
বৈচিত্র্যময় প্রেমস্বত্বার মোহময় উদ্ভাসন রতন সিদ্দিকীর সাহিত্যকর্মের নিপূণ অলঙ্কার। প্রবন্ধ বা গল্প, গবেষণা বা সমালোচনা- যাই হোক; শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কাহিনি ও পরম্পরা বিন্যাস অভিনব মুগ্ধতায় মোহময় পরিণতির
অপেক্ষায় পাঠকের হৃদয়কে অস্থির করে রাখে। কথোপকথন, প্রাসঙ্গিকতা, সযুশ্যময় পরিবেশ-চয়ন, আবেগ নিয়ন্ত্রিত প্রবেগ, লিপ্সা-নিস্পৃহ দৃষ্টিভঙ্গি প্রভৃতি রতন সিদ্দিকীর সাহিত্য কর্মকে অধির মদিরতায় আবেশিত করে রাখে। বাস্তবতার আলোকে জীবনবোধের
নিপুণ কাহিনির সাবলীল
সৌকুমার্য, জ্যোস্নার মতো নিস্তব্ধ প্রমুগ্ধতা, নদীর মতো অস্থির তরঙ্গ তার সাহিত্য
কর্মের ব্যাকুল ঝড়ের আকুল পূর্বাভাস। তবে সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হচ্ছে ভাষা। যেন অপূর্ব
বাক্য থরে থরে থোড়ায় থোড়ায় জীবনবন্দি বাস্তবতার
অহর্নিশ প্রতীক্ষা। যা কোনও অবিশ্বাস্য ঘটনাকেও পাঠকের কাছে স্বতসিদ্ধ বাস্তবতায়
মুখর করে তুলে। ব্যতিক্রমী উপস্থাপনায় সর্বজনীন পরিব্যাপ্তির মদিরতা পাঠককে গল্প থেকে
বাস্তবে নিয়ে যায়। কারণ আছে এর। তার সাহিত্যকর্ম অভিজ্ঞতার তিল তিল প্রতিফলনে গড়ে উঠা
আবাদি সবুজের স্বপ্নীল ফলক। এখানে কষ্ট আছে, শ্রম আছে; আছে পাওয়ার আনন্দে পুলকিত হবার
বাসনা আবার হারানোর বেদনায় অশ্রুভগ্ন দিশা। তাই রতন সিদ্দিকীর লেখা তার মতোই উচ্ছ্বল হাসির প্রাণোচ্ছ্বল নির্ঝরতা এবং মনবোধের অবিশ্রান্ত ধারা। আমার ভালো লাগার একজন তাই তিনি।
অবশেষে :
অবশেষে :
লেখাটি শেষ হওয়ার পর আমার ছেলে পড়ে বলল : ‘তার’ বানানে চন্দ্রবিন্দু দাও। তিনি
সম্মানিত ব্যক্তি। সম্মানিত ব্যক্তিদের সর্বনামে বাংলায় চন্দ্রবিন্দু দিতে হয়।
আমি বললাম : দেব না।
আমি বললাম : দেব না।
কেন দেবে না?
রতন সিদ্দিকী চন্দ্রবিন্দু নন, চন্দ্র। তিনি ব্যক্তি নন কেবল, আলো, জ্যোতি। তাকে বিন্দুতে
বিশেষায়িত করার স্পর্ধা অন্তত আমার নেই।
বিশেষ দ্রষ্টব্য : এটি খসড়া। বানান ভুল থাকবে। মন্তব্য কলামে সংশোধন কাম্য।
বিশেষ দ্রষ্টব্য : এটি খসড়া। বানান ভুল থাকবে। মন্তব্য কলামে সংশোধন কাম্য।
No comments:
Post a Comment