Thursday 31 December 2020

 

পাঠক যদি একই সঙ্গে উপন্যাসের চরিত্র হয়ে যায়, তাহলে কেমন লাগবে? এই উপন্যাসে এমনটি ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। উপন্যাসের নায়ক গোপাল। কোনো নায়িকা নেই। আমি জানি না গোপাল এখন
কোথায়। এটাও জানি না, মার্কিন গবেষক ও মিশনারি দলের সঙ্গে চলে যাবার পর তার আগের নাম বহাল আছে কি না। থাকার কথা নয়, তবে থাকতেও পারে।
সেই ১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দ, এখন ২০১৮। পঁচিশ বছর গোপালের সঙ্গে দেখা নেই। গোপালের কথা মনে পড়লে শুধু চোখে ভাসে মাটিতে গড়াগাড়ি আর প্রথম দিনের মেথর-ছড়াটি। এতদিন পর দেখলেও চিনতে পারব বলে মনে হয় না। অবশ্য সে আমাকে দেখলে চিনতে পারবে। 

মেধাবীদের স্মরণশক্তি সবদিকে প্রখর। 
যত বার আমেরিকা গিয়েছি ততবার মনে পড়েছে গোপালের কথা। ইচ্ছে করত আমেরিকার সব ইউনিভার্সিটি খুঁজে মেথরের ছেলে শিশু গোপালের মুখটা একটু দেখি, কিন্তু এটি সম্ভব ছিল না। গুগুলে সার্চ দিলে অনেক গোপাল আসে-- হাজার হাজার। কিন্তু আমার গোপাল আসে না। আমার গোপাল শিশু গোপাল, দাড়িমোজহীন কৃষ্ণ গোপাল। গুগুলের সব গোপাল দাড়িমোজে একাকার।
কীভাবে চিনব? সপ্তম শ্রেণির ছাত্র গোপালের চেহারা গুগুলে নেই। এখন গোপালের বয়স চল্লিশ ছাড়িয়ে। প্রাইমারি স্কুলে ভর্তির সময় প্রধান শিক্ষক গোপালের জন্ম তারিখ লিখেছিলেন ১৯৭৯ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ ডিসেম্বর। যদিও গোপালের প্রকৃত জন্মবর্ষ ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দ। চল্লিশে চেহারা দেখে ষোল বছরের গোপালকে পক্ষে খুঁজে নেওয়া সম্ভব নয়। এমনকি সামনে দাঁড়ালেও।
নন্দীর হাট ছেড়ে আসার সময় গোপালকে একটা কলম দিয়েছিলাম। পার্কার। আকিদের বাবা মুহিবুল কাদের চৌধুরী কলমটি দিয়েছিলেন। আমি জানি না, গোপালের কাছে কলমটি আছে কি না।
সুপ্রিয় পাঠক, আমেরিকায় গোপাল নামের কারো সঙ্গে দেখা হলে, ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দে জন্ম হলে জিজ্ঞেস
ড. মোহাম্মদ আমীন
করবেন আমাকে চেনে কি না। যদি বলে চিনে, তাহলে আমাকে খবর দেবেন। আমি গোপালের মুখটা দেখতে চাই। দেখতে চাই গোপাল কত বড়ো হয়েছে। কেমন হয়েছে তার অবয়ব, কণ্ঠের স্বর, চোখের নাচন এবং ইচ্ছার পাতন।
মেধাবীদের স্মরণশক্তি সবদিকে প্রখর। 
যত বার আমেরিকা গিয়েছি ততবার মনে পড়েছে গোপালের কথা। ইচ্ছে করত আমেরিকার সব ইউনিভার্সিটি খুঁজে মেথরের ছেলে শিশু গোপালের মুখটা একটু দেখি, কিন্তু এটি সম্ভব ছিল না। গুগুলে সার্চ দিলে অনেক গোপাল আসে-- হাজার হাজার। কিন্তু আমার গোপাল আসে না। আমার গোপাল শিশু গোপাল, দাড়িমোজহীন কৃষ্ণ গোপাল। গুগুলের সব গোপাল দাড়িমোজে একাকার।
কীভাবে চিনব? সপ্তম শ্রেণির ছাত্র গোপালের চেহারা গুগুলে নেই। এখন গোপালের বয়স চল্লিশ ছাড়িয়ে। প্রাইমারি স্কুলে ভর্তির সময় প্রধান শিক্ষক গোপালের জন্ম তারিখ লিখেছিলেন ১৯৭৯ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ ডিসেম্বর। যদিও গোপালের প্রকৃত জন্মবর্ষ ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দ। চল্লিশে চেহারা দেখে ষোল বছরের গোপালকে পক্ষে খুঁজে নেওয়া সম্ভব নয়। এমনকি সামনে দাঁড়ালেও।
নন্দীর হাট ছেড়ে আসার সময় গোপালকে একটা কলম দিয়েছিলাম। পার্কার। আকিদের বাবা মুহিবুল কাদের চৌধুরী কলমটি দিয়েছিলেন। আমি জানি না, গোপালের কাছে কলমটি আছে কি না।
সুপ্রিয় পাঠক, আমেরিকায় গোপাল নামের কারো সঙ্গে দেখা হলে, ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দে জন্ম হলে জিজ্ঞেস করবেন আমাকে চেনে কি না। যদি বলে চিনে, তাহলে আমাকে খবর দেবেন। আমি গোপালের মুখটা দেখতে চাই। দেখতে চাই গোপাল কত বড়ো হয়েছে। কেমন হয়েছে তার অবয়ব, কণ্ঠের স্বর, চোখের নাচন এবং ইচ্ছার পাতন।
ভূমিকা উপন্যাসের সারসংক্ষেপ নয়, লেখকের অকথিত কথার বিশুদ্ধ রূপ। লেখক যে কথা উপন্যাসে বলতে পারেন না, বা কৌশলগত কারণে বলা সম্ভব হয় না, ভূমিকা সেটি সংক্ষেপে তুলে ধরেন। তাই ভূমিকা পড়লে পাঠক উপন্যাসের বাইরেও একটি বিষয় সম্পর্কে জ্ঞাত হতে পারেন। সেটি হচ্ছে উপন্যাসের ইতিহাস। লেখকের তাড়নার উৎস। উপন্যাস জীবন-কাহিনির সুপ্ত কথামালার শৈলী প্রকাশ। এখানে লেখক নিজের মনের ইচ্ছা মিশিয়ে কল্পনাকে বাস্তবতার এবং বাস্তবতাকে কল্পনার শৈলী ঢালায় উপস্থাপন করেন। এটাই সাহিত্য। তাই উপন্যাস হচ্ছে বাস্তবতা আর কল্পনার মিলনে সৃষ্ট এক পরাবাস্তব প্রকৃতি। এই উপন্যাসের ক্ষেত্রেও এটি সত্য। চরিত্রগুলিকে যথাসম্ভব তাদের ক্ষেত্রে সঞ্চারিত ক্ষেত্রে নিয়োজিত রাখার চেষ্টা করেছি। দীর্ঘ দিন পর অনেকের নাম ভুলে গিয়েছিলাম। তাই উপন্যাসের অন্যতম চরিত্র সেলিম ও আনোয়ার মাসুমকে মোবাইল করে নাম জেনে নিতে হয়েছে।

গোপাল আমার চোখের সামনে নেই। এই উপন্যাসে গোপাল বেঁচে থাকবে। হয়তো কোনোদিনও চোখেও পড়ে যেতে পারে বইটি। সে আশায় রইলাম। আর একটা কথা। এরমধ্যে যদি কোনোভাবে গোপালের দেখা হয়ে যায়, তাহলে বইয়ের পরবর্তী সংস্করণে আর একটা অধ্যায় বাড়ব।

 যা প্রেম, তা-ই ভালোবাসা এবং যা ভালোবাসা তা-ই প্রেম। তাই প্রেম ও ভালোবাসা

শব্দের অর্থগত কিংবা প্রায়োগিক কোনো পার্থক্য নেই। আমার মেয়ে আমার প্রেম। আমার মেয়ে আমার ভালোবাসা। ভালোবাসা বা প্রেম যৌগিক বা মিশ্র ক্রিয়ায় পরিণত হলে তা কামময, কামার্ত বা যৌনতাময় হয়ে যায়। যেমন : প্রেম করা, প্রেমে পড়া, ভালোবাসা করা, ভালোবাসায় পড়া প্রভৃতি।
(১) আমার ঈশ্বর আমার প্রেম, (২) আমার ঈশ্বর আমার ভালোবাসা, (৩) আমার মা আমার প্রেম, (৪) আমার মা আমার ভালোবাসা। চারটি বাক্যে ব্যবহৃত প্রেম ও ভালোবাসা শব্দদ্বয়ের অর্থ অভিন্ন এবং প্রায়োগিক বিবেচনাতেও কোনো দ্বিধা বা আপত্তি আসে না। যখন প্রেম ও ভালোবাসার সঙ্গে ক্রিয়া যুক্ত হয়ে পড়ে তখন প্রেম ও ভালোবাসায় কাম বা দৈহিক আবেশ এসে পড়ে এবং প্রেম ও ভালোবাসা শব্দের ব্যবহারের ক্ষেত্র কামের কারণে সীমিত ও স্পর্শকাতর হয়ে পড়ে। কারণ সবার সঙ্গে কাম করা যায় না কিন্তু সবার সঙ্গে কামীহন প্রীতি করা যায়। তাই যাদের সঙ্গে কাম করা যায় না, তাদের প্রতি স্নেহপ্রীতি বা আদর সোহাগ বোঝাতে ক্রিয়াহীন প্রেম বা ক্রিয়াহীন ভালোবাসা দুটোই প্রয়োগ করা যায়।
“(৪) আমার মা আমার প্রেম এবং আমার মা আমার ভালোবাসা’ বলা সংগত হলেও (৭) “আমার মায়ের সঙ্গে আমি প্রেম করি” কিংবা (৮) “আমার মায়ের সঙ্গে আমি ভালোবাসা করি” বলা সংগত নয়।” তবে ক্রিয়াবিমুক্ত প্রেম সবার সঙ্গে করা যায়। যেমন আমার মা-ই আমার প্রেম, আমার দেশই আমার প্রেম।
ইংরেজি ভাষায় ভালোবাসা ও প্রেম দুটোকে love হিসেবে দেখা হয়। এছাড়া loving, affection, attachment, endearment, fancy, devotion, amour, friendship, become addicted, addict, be fond of, be keen on, be carried away প্রভৃতি শব্দও ভালোবাসা বা প্রেম প্রকাশে প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। তবে বাংলা ভাষায় ভালোবাসা ও প্রেম শব্দটি বিশেষ ক্ষেত্রে অত্যন্ত স্পর্শকাতর এবং খুব সাবধানে প্রয়োগ করা হয়। তবে বাংলার মতো ইংরেজিতেও কামযুক্ত বা ক্রিয়াসম্পৃক্ত স্নেহমমতাই হচ্ছে প্রেম। যেমন make love. কামবিমুক্ত প্রেম যে কারও সঙ্গে করা যায়। যেমন : আমার দেশবাসী আমার প্রেম।
কাম অর্থ কাজ কিন্তু কাম বলতে সাধারণত দৈহিক আবেশ, যৌনাবেদন প্রভৃতি বুঝায়। ভালোবাসা ও প্রেম যখন ক্রিয়ামুক্ত থাকে তখন সেটি নিষ্কাম। ভালোবাসা নিজেই ক্রিয়া, নিজেই বিশেষণ এবং নিজেই বিশেষ্য। প্রেম কিন্তু বিশেষ্য ও বিশেষণ হলেও অন্য কোনো ক্রিয়াযুক্ত না করলে তা কামহীন। যেমন : আমার বাবা আমার প্রেম। অন্য কোনো ক্রিয়া ছাড়াও ভালোবাসাকে ক্রিয়ামূলকভাবে প্রকাশ করা যায়। যেমন : আমি তোমাকে ভালোবাসি। কিন্তু ‘আমি তোমাকে প্রেম’ অসম্পূর্ণ বাক্য।
ভালোবাসা ও প্রেম যখন বিশেষণ এবং ক্রিয়ায় আদৃত থাকে তখন সেটি নিষ্কামপ্রীতি কিন্তু যখন মিশ্র ক্রিয়া হয় তখনই দুটো কামযৌনতায় সচল হয়ে উঠে। সাধারণত ভালোবাসা নিষ্কামপ্রীতি বলে অন্য ক্রিয়া ছাড়া ভালোবাসা শব্দের সফল ব্যবহার করা যায়। যেমন : আমি মাকে ভালোবাসি। পক্ষান্তরে প্রেম সাধারণত কামময় বলে এটির কামময় প্রকাশে অন্য ক্রিয়া আনতে হয়। রহিম মঞ্জুরার সঙ্গে প্রেম করে। এখানে ‘করে’ ক্রিয়া না আনলে প্রেম অর্থহীন হয়ে যায়।
ভলোবাসার চেয়ে প্রেম অধিক ক্রিয়াময়। যেমন : প্রেম করা, প্রেমে পড়া যত বেশি বলা হয় বা লেখা হয় ভালোবাসা করা, ভালোবাসায় পড়া, তত বেশি বলা হয় না বা লেখা হয় না।