Wednesday 6 March 2019

অলৌকিক শিশু / প্রমিতা দাশ লাবণী।



অলৌকিক শিশু ড. মোহাম্মদ আমীনের লেখা একটি শিশুকিশোর উপন্যাস। বইটির প্রকাশক পুথিনিলয়,বাংলাবাজার, ঢাকা। বইটি পড়লে পাঠকের মন সহজে আর্দ্র হয়ে যাবে পরোপকারের ইচ্ছায়। শিশুকিশোরের মনে এমন বোধ সৃষ্টি হলে ভবিষ্যজীবনে সেই শিশুকিশোর গড়ে উঠতে পারে আদর্শ মানুষ হিসেবে। এবার দেখুন কী আছে বইটিতে- মেথরের শিশুসন্তান গোপাল পিতৃহীন মা প্রভাতি সেরাজুল হক সাহেবের বাড়ির মেথর গাড়িতে চাপা পড়ার ভয়ে প্রভাতি গোপালকে গাছের সঙ্গে বেঁধে রেখে কাজ করেন প্রচ-
শীতে গোপাল চিৎকার করে কাঁদে সেরাজুল হক সাহেবের বাড়ির গৃহশিক্ষক গোপালের দুরবস্থা দেখে মর্মাহত হন তিনি গোপালকে শিকলমুক্ত নিজের রুমে নিয়ে আসেন এরপর থেকে প্রভাতি যতক্ষণ মেথরের কাজ করতেন গোপাল ততক্ষণ গৃহশিক্ষকের রুমে থাকত গৃহশিক্ষক, গোপালকে পড়াতে শুরু করেন কয়েক মাসের মধ্যে  বোঝা যায় গোপাল অত্যন্ত মেধাবী গৃহশিক্ষক নিজ উদ্যোগে গোপালকে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি করিয়ে দেন নিজের প্রচ- অভাব সত্ত্বেও গোপালের যাবতীয় খরচ বহন করে  যেতে থাকেন গোপাল পঞ্চম শ্রেণিতে বৃত্তি পায় সপ্তম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার কয়েকদিন পর গৃহশিক্ষক সরকারি চাকরিতে যোগদান করেন কয়েক মাস গোপালের সঙ্গে যোগাযোগ থাকলেও ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যায় ষোল বছর পর জানতে পারেন,  গোপাল অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তি পেয়েছিল এসএসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষায়ও স্ট্যান্ড করেছিল বর্তমানে আমেরিকার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিজ্ঞানের প্রফেসর মেথরের ছেলে গোপাল কীভাবে প্রফেসর হলো তাই এই উপন্যাসের আলেখ্য

Wednesday 13 February 2019

নজরুল জাতীয় কবি, দলিল কোথায়? / ড. মোহাম্মদ আমীন


ছোটোবেলা থেকে জেনে এসেছি বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম বাংলাদেশের জাতীয় কবি। চাকুরিতে যোগদানের পর বিভিন্ন মুখে জানতে পারি, কাজী নজরুল ইসলাম সরকারিভাবে বাংলাদেশের জাতীয় কবি নন। তিনি কেবল লোকমুখে প্রচারিত তথ্যের ভিত্তিতে বাংলাদেশের জাতীয় কবি এবং তাঁর ‘জাতীয় কবি’ পদবি ধারণের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি নেই। এমন অভিযোগ আমাকে বিষয়টি সম্পর্কে আগ্রহী করে তোলে। ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে উপ-সচিব হিসেবে যোগদানের পর নিজ উদ্যোগে প্রকৃত বিষয়টি জানার চেষ্টা করি। চেষ্টার অংশ হিসেবে প্রযোজ্য সময়ে জারিকৃত গেজেট প্রজ্ঞাপনগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে দেখতে থাকি। 
শিক্ষামন্ত্রণালয়ে উপসচিব হিসেবে যোগদানের পর আমার উদ্যোগ আরও সহজ এবং
সংগতকারণে আরও বেগবান হয়। রহস্য উন্মোচনের জন্য কাজী নজরুল ইসলামকে জাতীয় কবি ঘোষণা সংক্রান্ত গেজেট বা কোনো প্রজ্ঞাপন আছে কি না তা অনুসন্ধানে ব্রত হই। ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের ২৪শে মে কাজী নজরুল ইসলামকে সপরিবারে বাংলাদেশে আনা হয় এবং ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ শে অগাস্ট তিনি বাংলাদেশেই মারা যান। তাই অনুসন্ধান প্রক্রিয়াটি আমি ওই সময়ে প্রকাশিত গেজেটপ্রজ্ঞাপন এবং সরকারি পত্রের মধ্যে সীমবাদ্ধ রাখি। প্রসঙ্গত, এর আগে বা পরে নজরুলকে জাতীয় কবি ঘোষণা করা হলে তা আমার অনুসন্ধানের বাইরে থেকে যেতে পারে। 
অনুসন্ধানের অনিবার্য পর্যায় হিসেবে আমি, ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের মে থেকে শুরু করে ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ শে অগাস্ট পর্যন্ত প্রকাশিত প্রায় সবগুলো গেজেট খুঁজে দেখেছি, কিন্তু কোথাও নজরুলকে জাতীয় কবি ঘোষণার গেজেট নোটিফিকেশন বা প্রজ্ঞাপন কিংবা অনুরূপ কোনো সরকারি আদেশ পাইনি। সচিবালয় গ্রন্থাগারে রক্ষিত ওই সময়ের সবগুলো গেজেট খুঁজেছি, কিন্তু প্রত্যাশিত কোনো প্রজ্ঞাপন আমার চোখে পড়েনি। ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যক্তিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রদত্ত সম্মাননা এবং অনারারি ডিগ্রি প্রভৃতি প্রদান সংক্রান্ত দলিলও পর্যালোচনা করা হয়।ওখানেও কাজী নজরুল ইসলামকে জাতীয় কবি ঘোষণা সংক্রান্ত কোনো প্রমাণক পাওয়া যায়নি। তবে ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দের ৯ই ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নজরুলকে ডি-লিট উপাধিতে ভূষিত করার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে, কিন্তু জাতীয় কবি ঘোষণা সংক্রান্ত কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দে নজরুলকে স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদানের সরকারি আদেশ জারী করা হয়েছে। 
সংস্কৃত মন্ত্রণালয়েও খোঁজ-খবর নিয়েছি, সেখানেও নজরুলকে জাতীয় কবি ঘোষণার বিষয়ে কোনো ডকুমেন্ট রক্ষিত নেই। আর্কাইভ এবং বাংলা একাডেমিতেও নজরুলকে জাতীয় কবি ঘোষণা সংক্রান্ত সরকারি কোনো প্রজ্ঞাপন বা অন্য কোনো প্রকার দলিল পাওয়া যায়নি। তবে সংস্কৃত মন্ত্রণালয় ও বাংলা একাডেমিতে নজরুলকে একুশে পদক প্রদান সংক্রান্ত প্রমাণক পাওয়া গিয়েছে। স্বাধীনতার পর সচিবালয়ে সচিব, অতরিক্ত সচিব, যুগ্ম-সচিব, উপসচিব এবং সেকশন অফিসার হিসেবে চাকুরি করেছেন এমন অনেকের কাছে নজরুলের ‘জাতীয় কবি’ ঘোষণার বিষয়টি জানতে চেয়েছি। সিনিয়র-জুনিয়র কোনো অফিসার এ বিষয়ে কোনো গেজেট দেখেননি বলে জানান। তাঁদের অভিমত, কাজী নজরুল ইসলাম মৌখিকভাবে বাংলাদেশের জাতীয় কবি, কাগজকলমে প্রাতিষ্ঠানিক ঘোষণার মাধ্যমে নন। 
এ বিষয়ে নজরুল ইনস্টিটিটের অস্পষ্টতা আরও বেশি। ইন্সটিটিউটের কয়েকজ জানান, মন্ত্রিপরিষদের একটি বৈঠকে কাজী নজরুল ইসলামকে জাতীয় কবি হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির প্রদানের প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছিল। কখন প্রশ্নের উত্তরে তারা কেউ দিতে পারেননি। কয়েকজন বলেছেন, সম্ভবত এরশাদের আমলে প্রস্তাবটি পাস হয়, কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়নি। আমি ওই সময় অনুষ্ঠিত মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের বেশ কয়েকটি সভার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত পর্যালোচনা করেও এমন কোনো তথ্য পাইনি। 
মৌখিকভাবে কেউ জাতীয় কবি হিসেবে পরিচিত হতে পারেন এবং জনস্বীকৃতিও পেতে পারেন, কিন্তু রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি কেবল মৌখিক বিষয় নয়, আনুষ্ঠানিকতা ও সার্বভৌম শক্তির দাপ্তরিক ঘোষণার বিষয়টিও থাকে। অধিকন্তু, জাতীয় কবি ঘোষণার একটি নির্দিষ্ট নীতিমালা রয়েছে। সে নীতিমালা অনুযায়ী কাউকে জাতীয় কবি ঘোষণা করতে হলে কিছু প্রক্রিয়া অবলম্বন করতে হয়। কাজী নজরুল ইসলামের বেলায় এসব করা হয়েছে-- এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি, অন্তত আমি পাইনি। অনেকে বলেন, ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে কবি নজরুলকে জাতীয় কবি ঘোষণা করা হয়েছে, কিন্তু কে করেছে, কোথায় এবং কীভাবে? এ প্রশ্নের সদুত্তর দূরে থাক, কোনো উত্তরই পাওয়া যায় না। 
আমার লেখা পড়ে অনেক উপহাস করে বলবেন, নজরুলের ‘জাতীয় কবি’ “তাঁর স্বীকৃতির প্রয়োজন নেই। তিনি স্বীকৃতি ছাড়াই আমাদের জাতীয় কবি।” আমিও তাই মনে করি, কিন্তু স্বীকৃতিটা কী এতই দামি কিংবা নজরুল কী এতই ফেলনা যে তা দেওযা যাবে না!, আমরা কী এতই অনুদার! যদিও ‘জাতীয় কবি’ উপাধি নামের প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি
ড. মোহাম্মদ আমীন
নজরুলের জন্য অনিবার্য নয়, কিন্তু আমরা কতটুকু বোধের পরিচয় দিতে পেরেছি- সে প্রশ্ন করা কি অন্যায় হবে? অনেকে বলেন, বঙ্গবন্ধু নামের কী গেজেট নোটিফেকশনে হয়েছে? হয়নি, কারণ ‘বঙ্গবন্ধু’ সরকারিভাবে সময়ে সময়ে জনগণকে প্রদত্ত কোনো পদক বা সম্মাননা নয়, কিন্তু জাতীয় কবি, জাতীয় অধ্যাপক প্রভৃতি সরকারিভাবে জনগণকে সময়ে সময়ে প্রদত্ত সম্মাননা, যা নির্ধারিত নীতিমালা অনুযায়ী অর্পণ করা হয়। যেমন : একুশে পদক, স্বাধীনতা পদক প্রভৃতি। অধিকন্তু, বঙ্গবন্ধু আর জাতীয় কবি এক নয়, বঙ্গবন্ধু অদ্বিতীয়, কিন্তু জাতীয় কবি একাধিক হতে পারেন।পৃথিবীর অনেক দেশে একাধিক জাতীয় কবি আছেন, আমাদের দেশে যেমন আছেন একাধিক জাতীয় অধ্যাপক।
অপ্রিয় হলেও সত্য যে, কাজী নজরুল ইসলাম বাংলাদেশের জাতীয় কবি হিসেবে পরিচিত হলেও সরকারিভাবে ঘোষিত নয়। অবশ্য পরবর্তীকালে সরকারি দলিলে বিভিন্ন প্রসঙ্গে নজরুলকে জাতীয় কবি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তাঁকে জাতীয় কবি উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশও প্রণীত হয়েছে। এটিও স্বীকৃতি, যদিও তা পরোক্ষ। 
নজরুল আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় কবি ঘোষিত না হলেও তিনি আমাদের জাতীয় কবি; আকাশ-বাতাসও এটি জানে। কিন্তু কেউ যদি আদালতে চ্যালেঞ্জ করে বসে, তখন কী হবে? জাতীয় কবি হিসেবে নজরুলের পরিচিতি এত ব্যাপক, গভীর, নিবিড় ও হার্দিক যে, এখানে সরকারি স্বীকৃতি সমুদ্রের প্রতি গোষ্পদের জলদানের মতোই তুচ্ছ। আকাশের অসীমতার প্রমাণ দিতে আকাশ লাগে, আকাশ কী দুটো আছে?

সন্মিত্রা / হায়াৎ মামুদ


সন্মিত্রা ড. মোহাম্মদ আমীনের স্যমন্তক সিরিজের তৃতীয় বই। স্যমন্তক যারা পড়েছেন তারা জানেন উপন্যাসে ড. আমীনের বিশিষ্টতা কত প্রখর ও জীবন্ত। স্যামন্তক বিগতে কয়েক বছরে আমার পড়া শ্রেষ্ঠ উপন্যাস। ওই উপন্যাস সিরিজের তৃতীয় উপন্যাসও ধারাবাহিকতার কারণে বিশিষ্টতার দাবি রাখে।
প্রথমে বলে রাখি, বইটি পড়লে আপনি অভিভূত না হয়ে পারবেন না। একটি উপন্যাসের চরিত্রে সাত জন নোবেল পুরস্কার বিজয়ীর আনোগোনা এবং কথোপকথন থাকলে তা অভিভূত করার মতোই বই কি। সংলাপ  চরিত্রস্বরূপতার কারণে এটি দার্শনিক বিশ্লেষণ-বিবৃত একটি বহুমাত্রিক উপন্যাসে পরিণত হয়েছে। এখানে প্রেম-দ্রোহ, আদর-ঘৃণা, ফুল-রক্ত এবং প্রাত্যহিক জীবনের খুঁটিনাটি দিকগুলো যেমন ভালোবাসা, অভিমান, জয়পরাজয় আর প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির বিদগ্ধ রম্যতা  নিকষ বাস্তবতার সমাহিত সৌকর্ষে তুলে আনার চেষ্টা করা হয়েছে। জামাল নজরুল ইসলাম, স্টিভেন হকিং, অমর্ত্য সেন, অমিয় চক্রবর্তী, মাসাহিতো, সুসানা ইয়োগানা, রচনা, পিসি রায়, প্রমিতা, মাদার মারিয়া, দার্শনিক চিকুচি, লুসি, রবার্ট, অমিয় বাগচী, জয়ন্ত নারলিকর, আবদুস সালাম, ওয়েনবার্গ, জোসেফসন, ফ্রিম্যান ডাইসন, রিচার্ড ফাইনম্যান, সুব্রহ্মনিয়াম চন্দ্রশেখর, জিম মার্লিস, রজার পেনরোজ, জ্যা অ্যান্দুজ, মার্টিন রিজ, লুইজ জনসন, হোয়েল, জ্যাজ ওয়ান, জন টেইলর, সৈয়দ আবুল হোসেন, লেনভেল ভ্যালেসিয়ান, হারুটিউনিয়ান, কামাল সিদ্দিকী,

ড. আনিসুজ্জামান, তসলিমা নাসরিন, বৎশিবা প্রমুখ বিশ^খ্যাত ব্যক্তিবর্গ এই উপন্যাসের চরিত্র ঠিক যেমনটি দেখা গিয়েছিল ‘অর্হণা’ উপন্যাসে। গ্রন্থের এসব চরিত্র এবং কথোপকথন বিবেচনায় সন্মিত্রা অসাধারণ হয়ে উঠেছে। উপন্যাসটি পড়া শুরু করলে আপনি নিমিষে পরিচিত  খ্যাতিমান ব্যক্তিদের মাঝে হারিয়ে যাবেন।
বাস্তবতার মাঝে কিছু কল্পনার মসলা দিয়ে বহুমুখী অভিধায় সজ্জিত বইটি একবার পড়–ন, তারপর বুঝতে পারবেন, ইতিহাসের চেয়েও কত বাস্তব হতে পারে উপন্যাস, ঘটনার চেয়েও কত প্রাঞ্জল হতে পরে বর্ণনা, অনুভূতির চেয়ে কত সরস হতে পারে লেখা এবং প্রেমের চেয়েও কত মুগ্ধকর হতে পারে চরিত্ররাজির আহ্বান। স্যমন্তক সিরিজের তৃতীয়  শেষ উপন্যাস সন্মিত্রা আপনার চিন্তাকে নাড়া দিতে সক্ষম হবে এটি আমি নির্দ্বিধায় বলতে পারি।
এমন একটি বৈশি^ চরিত্র-সজ্জিত উপন্যাস বাংলা সাহিত্যের উপন্যাস ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করবে নিঃসন্দেহে।

Sunday 10 February 2019

মধ্যরাতের কান্না ও সুভাষ সর্ব্ববিদ্যা / ড. মোহাম্মদ আমীন



সুভাষ সর্ব্ববিদ্যা মূলত গাল্পিক। তবে কবিতাতেও তার মেধাস্ফুরিত সঞ্চরণ পরিলক্ষিত।
কাব্যিক মনে গাল্পিক অবয়ব ফুটিয়ে তোলা গেলে যে-কোনো সাধারণ বিষয়ও অসাধারণহয়ে উঠে। সুভাষ সর্ব্ববিদ্যার ক্ষেত্রেও তা ঘটেছে, তিনি এমন কাজে বেশ নিপুণ। তাঁর কলমের ছোঁয়া পেলে সামান্য বিষয়ও অসামান্য হয়ে উঠে। এটি একজন লেখকের অনেক বড়ো একটা গুণ, পাঠক মূলত এমন রসই আস্বাদন করতে চান।
সুভাষের লেখা সহজবোধ্য, ঝরঝরে এবং সাবলীল। এ গ্রন্থেও তার পরিচয় পাওয়া যায়। বাক্যচয়নে  তাঁর স্বভাবজাত সৌন্দর্য প্রকৃতির মতো ইতস্তত- মনে হয় কোনো সযতন প্রয়াস ছাড়াই প্রকৃতির উদাস সৃষ্টির মতো আবেগে আবেগে বাক্যের পর বাক্যে নিজে নিজে বের হয়ে এসেজে  সেজেগুজে। যা পাঠককে সহজে আকৃষ্ট করতে পারে গাল্পিক নিনাদের বিহ্বল অমিয়তায়। 
সুবাসের ছোটোগল্প বাহ্যিক অবয়বে ছোটো হলেও অন্তর্নিহিত বর্ণন আদৌ ছোটো নয়, আণবিক বোমার মতো সীমাহীন শক্তি নিয়ে মনকে আচ্ছন্ন করে দেয় অনবদ্য ভাবনার
অপার্থিব জগতে। জীবনের উপলব্ধিগুলোকে শব্দের মমতায় তিনি যেভাবে তুলে ধরেন-তা গল্পকে হৃদয়ের গভীরে এবং হৃদয়কে গল্পের গভীরে নিয়ে গিয়ে সৃষ্টি করে তুমুল এক আলোড়নের। এই আলোড়নই হচ্ছে সাহিত্যরস।
এ গল্পগ্রন্থের গল্পগুলোও তেমনি সাহিত্যরসে টুইটুম্বর। জীবনের বাস্তবতা থেকে ওঠে আসা প্রতিটি বাক্য ঘটনায় প্রবেশ করে জীবনবোধকে অনুবোধে উজ্জীবিত করে তুলেছে। বাক্যসজ্জার নিপুণ কারুকার্যে সাঁতার কেটে মনোহর অনুভূতির সীমাহীন রাজ্যে হারিয়ে যেতে চাইলে সুবাস সর্বববিদ্যার এই গল্পগুলো পড়ে দেখতে পারেন। আশা করি হতাশ হবেন না।

রায়োহরণ /ড. হায়াৎ মামুদ

রায়োহরণ একটি উপন্যাস এবং লেখক ড. মোহাম্মদ আমীন। প্রথমে বলে রাখি, বইটি পড়লে আপনি অভিভূত না-হয়ে

পারবেন না। একটি উপন্যাসের চরিত্রে সাত জন নোবেল পুরস্কার বিজয়ীর আনোগোনা এবং কথোপকথন থাকলে তা অভিভূত করার মতোই বই কি। সংলাপ ও চরিত্রস্বরূপতার কারণে এটি দার্শনিক বিশ্লেষণ বিবৃত একটি বহুমাত্রিক উপন্যাসে পরিণত হয়েছে। এখানে প্রেম-দ্রোহ, আদর-ঘৃণা, ফুল-রক্ত এবং প্রাত্যহিক জীবনের খুঁটিনাটি দিকগুলো ভালোবাসা, অভিমান, জয়পরাজয় আর প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির বিদগ্ধ রম্যতা ও নিকষ বাস্তবতার সমাহিত সৌকর্ষে তুলে আনার চেষ্টা করা হয়েছে। জামাল নজরুল ইসলাম, স্টিভেন হকিং, অমর্ত্য সেন, অমিয় চক্রবর্তী, মাসাহিতো, সুসানা ইয়োগানা, রচনা, পিসি রায়, প্রমিতা, মাদার মারিয়া, দার্শনিক চিকুচি, লুসি, রবার্ট, অমিয় বাগচী, জয়ন্ত নারলিকর, আবদুস সালাম, ওয়েনবার্গ, জোসেফসন, ফ্রিম্যান ডাইসন, রিচার্ড ফাইনম্যান, সুব্রহ্মনিয়াম চন্দ্রশেখর, জিম মার্লিস, রজার পেনরোজ,  জ্যা অ্যান্দুজ, মার্টিন রিজ, লুইজ জনসন, হোয়েল, জ্যাজ ওয়ান, জন টেইলর, সৈয়দ আবুল হোসেন, লেনভেল ভ্যালেসিয়ান, হারুটিউনিয়ান, কামাল সিদ্দিকী, ড. আনিসুজ্জামান, তসলিমা
নাসরিন, বৎশিবা প্রমুখ বিশ^খ্যাত ব্যক্তিবর্গ এই উপন্যাসের চরিত্র- ঠিক যেমনটি দেখা গিয়েছিল ‘অর্হণা’ উপন্যাসে। গ্রন্থের এসব চরিত্র এবং কথোপকথন বিবেচনায় সন্মিত্রা অসাধারণ হয়ে উঠেছে। উপন্যাসাটি পড়া শুরু করলে আপনি নিমিষে পরিচিত ও খ্যাতিমান ব্যক্তিদের মাঝে হারিয়ে যাবেন।

বাস্তবতার মাঝে কিছু কল্পনার মসলা দিয়ে বহুমুখী অভিধায় সজ্জিত বইটি একবার পড়–ন, তারপর বুঝতে পারবেন, ইতিহাসের চেয়েও কত বাস্তব হতে পারে উপন্যাস, ঘটনার চেয়েও কত প্রাঞ্জল হতে পরে বর্ণনা, অনুভূতির চেয়ে কত সরস হতে পারে লেখা এবং প্রেমের চেয়েও কত মুগ্ধকর হতে পারে চরিত্ররাজির আহ্বান। স্যমন্তক সিরিজের তৃতীয় ও শেষ উপন্যাস সন্মিত্রা আপনার চিন্তাকে নাড়া দিতে সক্ষম হবে- এটি আমি নির্দ্বিধায় বলতে পারি। এমন একটি বৈশি^ক চরিত্র-সজ্জিত উপন্যাস বাংলা সাহিত্যের উপন্যাস ভা-ারকে সমৃদ্ধ করবে- নিঃসন্দেহে।

Monday 21 January 2019

নিউটনের ছাত্রী / প্রমিতা দাশ লাবণী


অসাধারণ মেধাবী সেলিমা আসলে নিউটনের ছাত্রী ছিল না, লেখকের ছাত্রী ছিল।চট্টগ্রামের জনৈক অশিক্ষিত কোটিপতির অশিক্ষিত বড়ো ছেলে, লেখকের কাছে তার বোনকে পড়ানোর প্রস্তাব নিয়ে এসে বলেছিলেন, “আমার বোন নিউটনের ছাত্রী। পুরো তল্লাটে তার মতো মেধাবী কেউ নেই।”
লেখক রাজি হয়ে গেলেন। আসলে, নিউটনের ছাত্রীকে পড়ানোর আগ্রহ দমাতে পারেননি তিনি। পড়াতে গেলে, প্রথম দিন পরিচয় পর্বে সেলিমা বলেছিল, “নিশ্চয় ভাইয়া আমাকে নিউটনের ছাত্রী হিসেব পরিচয় দিয়েছেন?”
হ্যাঁ।
“আমি কিন্তু নিউটনের ছাত্রী নই”, সেলিমা বলেছিল, “নিউটেনের ছাত্রী।তবে, ভাইয়ার কারণে আমি এখন সবখানে নিউটনের ছাত্রী। তাই বিজ্ঞানী নিউটনকে পুরোপুরি অত্মস্থ করে নিয়েছি। নিউটনের সব তথ্য আমার জানা।
লেখক বলেছিলেন, এখন পড়া শুরু করি।
“আগে আপনার মেধা যাচাই”, সেলিমা লেখককে বিস্মিত করে দিয়ে বলেছিল।
মানে! লেখকের প্রশ্নে ছিল ক্ষোভ, লজ্জা আর কিছুটা সংকোচ।
“আমাকে পড়াতে পারবেন কি না দেখতে হবে না? ইন্টারভিউ ছাড়া চাকুরি হয় না”, বলেই সেলিমা প্রশ্ন করেছিল, নিউটনের পিতামহের নাম কী?
জানি না, সোজা উত্তর লেখকের।
এই প্রশ্নটা কী আমাদের পরীক্ষায় আসবে?
আসতে পারে আবার না-ও আসতে পারে, কিন্তু জানা থাকা ভালো।
এরপর আরো প্রশ্ন, প্রশ্নের পর প্রশ্ন। সেলিমার ত্রিশ ভাগ প্রশ্নের উত্তরও দিতে পারেননি লেখক। সেলিমা হেসে বিনয়ের সঙ্গে বলেছিল, স্যার, আপনি তো অনেক কিছু জানেন না, আমাকে কীভাবে পড়াবেন?
লেখক বলেছিলেন, সবাই হয়তো সবকিছু জানে, কিন্তু একজনে সবকিছু জানে না। যেগুলো আজ পারলাম না, সেগুলো আগামীকাল
জেনে এসে জানাব। কিন্তু আমি তো ফেল করেছি।
না, পাস করেছেন, সেলিমা খুশিতে উদ্ভাসিত হয়ে বলেছিল, “এ পর্যন্ত যত শিক্ষক এসেছেন তাদের সবাইকে প্রশ্নগুলো করেছিলাম, সবাই ধমক দিয়ে বলেছেন, এগুলো পরীক্ষায় আসবে না, পড়ার প্রয়োজন নেই। ক্লাসের বই নাও। একমাত্রই আপনিই বলছেন, পড়ার প্রয়োজন আছে এবং জেনে এসে জানাবেন। আপনিই আমার শিক্ষক হওয়ার উপযুক্ত। ”
লেখক পড়াতে শুরু করলেন সেলিমাকে।
পড়াতে পড়াতে তার মেধায় মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন, লেখকের জীবনে দেখা শ্রেষ্ঠ মেধাবীদের অন্যতম একজন ছিল সেলিমা। এসএসসি পরীক্ষায় কুমিল্লা বোর্ডে মেয়েদের প্রথম স্ট্যান্ড করা সেলিমার পরিণতি কী হয়েছিল- এটিই আলোচ্য উপন্যাসের বিষয়বস্তু।

বইটির প্রকাশক : পুথিনিলয়
প্রচ্ছদ : মোস্তাফিজ কারিগর।
মূল্য : ১২৫ টাকা।
পাবেন : অমর একুশে গ্রন্থমেলায় (২০১৯) পুথিনিলয়ের স্টলে।