Saturday 6 October 2018

স্ত্রীদণ্ড বনাম মৃত্যুদণ্ড / ড. মোহাম্মদ আমীন


“এমনিতে কিছুটা পুরনো কিন্তু এখনো অনেক মাইল ছোটার ক্ষমতা রাখে। আকার-প্রকার ঠিকই আছে, রংও চটেনি বিন্দুমাত্র। মাঝেমধ্যে একটু কানফাটা চিৎকার করে তবে চকচকে ধাতুর কোনো জিনিস দিলে এদম চুপ হয়ে যায়, নিঃশব্দে চলে। এত ভালো, তারপরও বিক্রির কারণ? যা পাওয়ার, তা আমার পাওয়া হয়ে গেছে। আমার ইচ্ছা,
বলুন তো এটি কীসের বিজ্ঞাপন?
সবাই বলবেন, গাড়ি বিক্রির বিজ্ঞাপন।
আসলে গাড়ি বিক্রির বিজ্ঞাপন নয়, স্ত্রী-বিক্রির বিজ্ঞাপন। তেত্রিশ বছর বয়স্ক সিমন ও-কান নিজের স্ত্রী-বিক্রির জন্য বিজ্ঞাপনটি দিয়েছিলেন। পেশায় তিনি ইয়র্কশায়ারের ওয়েকফিল্ডের প্রকৌশলী। বিজ্ঞাপন দেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে স্ত্রীর দাম উঠে যায় ৬৬ হাজার পাউন্ড, মানে বাংলাদেশি ৯৯ লাখ টাকা। কী বুঝলেন? আপনার স্ত্রী আপনার কাছে যতই ফেলনা হোক না কেন, অন্যের কাছে তার দাম সহস্র লাখ টাকা।
সিমন ওকানের স্ত্রী লিয়ান্ড্রা এটি দেখে ওই ওয়েব সাইটে ঘোষণা দিয়ে বসেন, আমি তাকে খুন করব।
কিন্তু কেন এমন বিজ্ঞাপন?
অফিস থেকে বাড়ি ফিরলে সাতাশ বছর বয়স্কা স্ত্রী লিয়ান্ড্রা শুধু খিচ খিচ করতেন। শরীর-মন খারাপ থাকলে আরো বেশি অবহেলা করতেন। ফিরতে দেরি হলে বলতেন “কোন মাগির কাছে ছিলে এতক্ষণ”। তাড়াতাড়ি এলে বলতেন, “চাকরি কি চলে গেছে? যাবেই তো, তোমার মতো অপদার্থ মা-বাবার অপদার্থ ছেলেকে কোন বেআক্কেল চাকরিতে রাখবে।” এসব শুনতে শুনতে ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে সিমন ও-কান পোস্টটি দিয়েছিলেন (ছবি দেখুন)। পোস্টের সঙ্গে লিয়ান্ড্রার একটি ছবিও দিয়েছিলেন। ইচ্ছুক ক্রেতারা অনুরোধ করেছিলেন নতুন কিছু ছবি দেওয়ার। এরপর কী হয়েছিল আমার জানা নেই। তবে ও-কান ওখান থেকে হাওয়া হয়ে গিয়েছিলেন।
স্ত্রীদের অত্যাচার নিয়ে স্বামীদের অভিযোগ নতুন নয়। নারী অধিকার অধিকমাত্রায় সুরক্ষিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অভিযোগের সংখ্যা, প্রকৃতি ও মাত্রাও বাড়ছে। স্বামীদের অভিযোগ, পুরুষদের অত্যাচার হতে স্ত্রীদের প্রতিকার পাওয়ার অনেক আইন আছে কিন্তু স্ত্রীদের অত্যাচার হতে পুরুষদের প্রতিকার পাওয়ার একটা আইনও নেই। কিন্তু পুরুষেরাই তো আইন প্রণয়ন করেন, তাহলে কেন পুরুষগণ তাদের নিজেদের সুরক্ষার জন্য আইন করেন না?
অক্সফোর্ডে পরিচালিত একটা গবেষণায় এর কিছুটা উত্তর পাওয়া যায়।
গবেষণায় বলা হচ্ছে -- নারীরাই পুরুষ নির্যাতন-বিরোধী কোনো আইন হতে দেয় না। পুরুষ আইন প্রণেতাগণ আইন প্রণয়ন করতে যাবার আগে স্ত্রী-কন্যা, মাবোন প্রমুখ-সহ নানা নারী বন্ধুদের নির্দেশ-প্ররোচনা বা আদরপ্রসূত অতিরিক্ত আবেগে বাধ্য হয়ে এমন আইন করে বসেন। কিন্তু যখনই কোনো আইন প্রণেতা তার স্ত্রীর অত্যাচারের শিকার হয়ে প্রতিবাদ করতে যান তখন অন্য পুরুষগণও একইভাবে তাড়িত হন। ফলে স্ত্রীর অনুকূলে এবং স্বামীর প্রতিকূলে আরো শক্ত আইন প্রণীত হয়ে যায়।
স্ত্রীদের অত্যাচার থেকে প্রতিকার পাওয়ার প্রত্যাশায় পুরুষ ও পরিবারের স্বার্থরক্ষার উদ্দেশ্য নিয়ে গঠিত ‘সেভ ইন্ডিয়ান ফ্যামিলি ফাউন্ডেশন’ নামের একটি সংস্থা মরণপূর্ব শ্রাদ্ধ করার ডাক দেন। ২১০৮ খ্রিষ্টাব্দের ১২ই সেপ্টেম্বর ‘মনের ডায়েরি’ নামের একটি অনলাইন পত্রিকায় খবরটি ছবি-সহ প্রকাশিত হয়।
খবরে প্রকাশ, দজ্জাল স্ত্রীদের হাত থেকে রক্ষা পেতে বারাণসীতে গিয়ে শ্রাদ্ধ শান্তি করলেন ১৫০ জন পুরুষ। ‘সেভ ইন্ডিয়ান ফ্যামিলি ফাউন্ডেশন’ এবং সংস্থার সদস্য অমিত দেশপাণ্ডে এই শ্রাদ্ধকাণ্ডের পরিকল্পক। তিনি দেশের সকল ‘অত্যাচারিত’ স্বামীদের ভয়াবহ বিবাহিত জীবনের শ্রাদ্ধ সম্পন্ন করার জন্য আহ্বান জানান। তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে পুরুষগণ মরণপূর্ব শ্রাদ্ধ সম্পন্ন করলেন। ভিন্ন ভিন্ন বয়সের এই স্বামীরা ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসেছেন। বয়স ও এলাকা ভিন্ন হলেও সবার উদ্দেশ্য ছিল অভিন্ন এবং তা হলো-- বারাণসীর পবিত্র ভূমিতে স্ত্রীদের পারলৌকিক কাজ সম্পন্ন করা। তবে তাদের কারো স্ত্রী মারা যাননি; সবাই জীবিত এবং বেশ সুস্থ। তাহলে পারলৌকিক কাজ সম্পন্ন করার কারণ কী?
অমিত দেশপাণ্ডে বলেন, বছরের পর বছর ধরে এই পুরুষরা স্ত্রীদের নৃশংস অত্যাচারের শিকার হয়েছেন। এবার তাঁদের মুক্তির পালা। পিণ্ড দিয়ে, পিশাচিনী মুক্তি পূজা সেরে, গঙ্গায় স্নান করে তাঁরা বিবাহিত জীবনের ভয়ঙ্কর স্মৃতি থেকে মুক্ত হতে চান। ‘বিষাক্ত নারীবাদ’ ভারতীয় বিবাহিত পুরুষের জীবনকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। এই শ্রাদ্ধকাণ্ড সেই
‘সেভ ইন্ডিয়ান ফ্যামিলি ফাউন্ডেশন’-এর সদস্য রাজেশ ভাখারিয়া বলেন, ভারতীয় আইন মূলগতভাবে পুরুষের
শুধু ভারতে নয়, ইউরোপ আমেরিকাসহ পৃথিবীর বিভিন্ন উন্নত দেশেও স্বামীর বিরুদ্ধে স্ত্রীর অত্যাচারের অভিযোগ পাওয়া যায়। কিন্তু প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তোলার সাহস পায় না। কারণ প্রত্যেকের ঘরে স্ত্রী আছে, আছে কন্যা, মা-বোন। ফলে এসব বিষয়ে প্রতিকার করার সাহস খুব কম পুরুষই পায়। এ বিষয়ে প্রায় সবার জানা একটা কৌতুক দিয়ে প্রবন্ধটা শেষ করব।
একরাতে সম্রাট তাঁর ছোটো রানির কপালে আদর দিতে দিতে বললেন, আমি আপনার বাবাকে দাক্ষিণাত্যের এবং আপনার বড়ো ভাইকে উত্তর প্রদেশের রাজা করে দিলাম। আপনি আপনার চাচাত বোন রুবিকে আমার করে দিতে রাজি হলেন না।
রানি : যদি রুবিকে আপনার হাতে তুলে দিই কী করবেন?
সম্রাট : আমি আপনার সব কথা শুনব। আমার মতো স্বামী আপনি পাবেন না।
রানি : সম্রাট হোক বা ফকিন্নি হোক সব স্বামীই বউয়ের কথা শোনেন। সত্যবাদীরা স্বীকার করেন মিথ্যুকেরা করেন না।
সম্রাট : রানি আপনার কথা ঠিক নয়। আমার রাজ্যে হাজার হাজার সাহসী বীর আছে। তারা কেউ বউকে ভয় পায় না।
রানি : বউকে ভয় পায় না, এমন একজন লোকও যদি পান তাহলে আমি রুবিকে আপনার হাতে তুলে দেব।
পরদিন সম্রাট ঘোষণা করে দিলেন, রাজ্যের যেসব লোক তাদের স্ত্রীকে ভয় পায় না তাদের সবাই আমার ডান পাশে এবং যারা তাদের স্ত্রীকে ভয় পায় তারা আমার বাম পাশে গিয়ে দাঁড়াবে। রাজা-প্রজা এবং উজির-নাজির হতে শুরু করে ভিক্ষুক পর্যন্ত বিবাহিত সবাইকে এই আদেশ পালন করতে হবে। যদি কেউ না আসে কিংবা এলেও প্রতারণা করে উলটো পাশে দাঁড়ায় তাহলে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে।
ধার্য তারিখ চলে এল।
সম্রাট ও তাঁর বামপাশে রানি সিংহাসনে সমাসীন। লোকজন আসছে আর আসছে। কিছুক্ষণের মধ্যে সম্রাটের বামপাশ জনসমুদ্র হয়ে গেল। রাজ্যের সব উজির-নাজির, রাজা, বীর সবাই বামপাশে, ডান পাশে কেউ নেই। সম্রাট চোখে অন্ধকার দেখছেন। এসময় এক চিকন লোক ধীরপদে সম্রাটের ডানপাশে গিয়ে দাঁড়ালেন। সম্রাট তা দেখে রুবির লোভে স্বস্তির নিঃশ্বাস দিয়ে রানির দিকে তাকালেন।
সম্রাট খুশিতে উৎফুল্ল হয়ে চিকন লোকটিকে বললেন, আমার রাজ্যের রাজা-উজির, বীর-বাহাদুর সেনাপতি-মন্ত্রী সবাই বামে তুমিই কেবল ডানে। সত্যি কী তুমি বউকে ভয় পাও না?
লোকটি বলল, হুজুর আমার বউ আমাকে ডান দিকে দাড়াতে বলেছে।
কেন?
বাম পাশে অনেক লোকের হুড়োহুড়ি হবে এবং আমার চিকন শরীর ওই চাপ সহ্য করতে পারবে না। তাই।
সম্রাট: এজন্য যে তোমার মৃত্যুদণ্ড হবে এটি জানো না।
জানি হুজুর।
তারপরও ডানে দাঁড়ালে যে?
হুজুর স্ত্রীদণ্ড মৃত্যুদণ্ডের চেয়েও ভয়াবহ।
বিপক্ষে। এ দেশে পশুকল্যাণের জন্যও মন্ত্রণালয় রয়েছে, কিন্তু পুরুষের প্রতি অন্যায় রোধের কোনো ব্যবস্থা নেই। প্রতিবছর ভারতে দাম্পত্য কলহে প্রায় ৯২,০০০ পুরুষ আত্মহত্যা করেন, অন্যদিকে দাম্পত্য কলহে আত্মঘাতী স্ত্রীর সংখ্যা মাত্র ২৪,০০০। ভারতীয় পেনাল কোডের ৪৯৮(এ) ধারার অপব্যবহার ঘটিয়ে হাজার হাজার পুরুষের জীবন নষ্ট করে দিচ্ছেন দজ্জাল মহিলারা।

বিষের বিরুদ্ধে শক্তি সঞ্চয়ের উদ্দেশ্যে করা হচ্ছে। শ্রাদ্ধ সেরে তাঁরা ‘পিশাচিনী মুক্তি যজ্ঞ’ করে গঙ্গায় স্নান করবেন। কারণ তাঁদের স্ত্রীরা দজ্জাল এবং এই ‘দজ্জাল’ স্ত্রীরা তাঁদের জীবন দুর্বিষহ করে তোলেছেন।

আমার অভিজ্ঞতা অন্যেরও হোক।” এটি ‘ই বে’ নামের অনলাইন সাইটের পুরনো গাড়ি বিক্রি বিভাগে প্রকাশিত একটি বিজ্ঞাপন। 

Monday 21 May 2018

বিশ্বকাপ ২০১৮ ফাইনাল খেলবে যারা / ড. মোহাম্মদ আমীন


আজ স্বপ্ন দেখলাম, স্বপ্ন দেখলাম জনদাবির পরিপ্রেক্ষিতে
বাংলাদেশের প্রতিটি বিভাগ, মূখ্যমন্ত্রীশাসিত রাজ্যে
প্রতিটি জেলা, বিভাগে
প্রতিটি উপজেলা, স্বয়সম্পূর্ণ জেলায়
প্রতিটি ইউনিয়ন, এক একটি উপজেলায়
প্রতিটি ওয়ার্ড, চেয়ারম্যানের আওতাধীন ইউনিয়নে
প্রতিটি পাড়া, মেম্বারের অধীন ওয়ার্ডে এবং বিশ্বাস করুন,
প্রতিটি বাড়ি আয়তন অনুপাতে কমিউনিটি সেন্টার, শপিং মল, মাঠ, বিল বা পুকুরে পরিণত হয়েছে। আমাদের গ্রামের বাড়িটা একটু বড়ো। দেখলাম অবাক হয়ে, এটি ফুটবলের মাঠ হয়ে গেছে। এত বড়ো বাড়িতে থাকব কীভাবে?
হায় হায়!
স্বপ্নরাজ জানাল, আগামী ১৫ই জুলাই, ২০১৮, রোববার রাত ৯টায় মস্কোতে বিশ্বকাপের যে ফাইনাল অনুষ্ঠানের কথা ছিল তা ওখানে হবে না।
কোথায় হবে?
ফুটবল মাঠের মতো বিশাল হয়ে যাওয়া তোমাদের চট্টগ্রামের চন্দনাইশের বাড়িতে অনুষ্ঠিত হবে। লোকজন বিশ্বকাপ ফাইনাল দেখার জন্য দলে দলে চট্টগ্রাম যাওয়া শুরু করেছে। তাই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ১২০ কিলোমিটার যানজট। ফাইনালের আগে এই জট কমবে না।
জানতে চাইলাম, ফাইনাল খেলবে কোন দুটি দেশ?
স্বপ্নরাজ বলল, দুই নয়, তিন দেশ একসঙ্গে খেলবে। বাংলাদেশের সঙ্গে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা একত্রে ফাইনাল খেলবে।
কীভাবে জানলে?
স্বপ্নরাজ বলল, বিশ্বকাপের অনেক বাকি। তারপরও তোমাদের দেশের যুবশক্তি যেভাবে ব্রাআ-ব্রাআ করছে তাতে সারা ফুটবল বিশ্ব ভয় পেয়ে কাঁপছে। তাদের ধারণা বাংলাদেশি এসব লোকেরা পাগল হয়ে গেছে। হুজুগে, অথর্ব, নিষ্কর্মা এবং ঐতিহ্যহীন কিছু কিছু বাংলাদেশি যেভাবে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা নিয়ে পরপূজকের মতো মস্তক অবনত করে যাচ্ছে তাতে মনে তাদের কোনো দেশ নেই, ভাষা নেই, ঐতিহ্য নেই, স্বকীয়তা নেই, কর্ম নেই, বিবেচনা, বই নেই, সাহিত্য নেই, সংস্কৃতি নেই।
তাহলে তাদের কী আছে?
পরনির্ভরশীল মন। তাদের অর্থহীন চিৎকারে বিশ্বের তাবৎ ফুটবল খেলোয়াড়দের হাত-পা অবশ হয়ে পড়েছে ভয়ে। তাদের কানের পর্দা ফেটে গেছে বাংলাদেশিদের ব্রাআ-ব্রাআ পাগলা চিৎকারে। বাংলাদেশিরা ল্যাটিন আমেরিকার যে দুটি দেশ নিয়ে এমন লজ্জাকর লাফালাফিতে উন্মাদ, বলা যায় সেই দেশদুটির প্রায় কোনো লোকই বাংলাদেশের নাম পর্যন্ত জানে না। দু-একজন হয়তো দাপ্তরিক প্রয়োজনে জানতে পারে।
স্বপ্নরাজকে বললাম, বাংলাদেশের সঙ্গে যদি ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার ফুটবল খেলা হয়, তাহলে বাংলাদেশিরা কেন বাংলাদেশের কথা না বলে ব্রাআ-ব্রাআ করছে?
স্বপ্নরাজ বলল, এদের দেশপ্রেম নেই। এরা মাতৃভাষাটাও ভালো জানে না।
তাই বাংলাদেশে জন্ম নিয়েও এদের আচরণ দেশদ্রোহী রাজাকারদের মতো
ভয়ংকর। মাইকেল মধুসূদনের ভাষায় তারা ‘পরধনলোভে মত্ত’। বিবেচনাশূন্য এসব বাংলাদেশিরা নিজের দেশের মাটির উপর দণ্ডায়মান ঘরের ছাদে, ভবনের শৃঙ্গে, বৃক্ষের শিখরে বিদেশের পতাকা ওড়ায়। এরা পুরোই ঐতিহ্যহীন, ছি! তোমার লজ্জা করে না এদের দেখে?
এরা ফুটবল প্রেমিক, লজ্জা করবে কেন?
এদের বুকে দেশপ্রেমের চিহ্নমাত্র নেই। তাই নিজের বুকে বিদেশি পতাকা লাগিয়ে গর্বভরে ঘুরে বেড়ায়। নিজের গায়ে বিদেশি নামাঙ্কিত জামা জড়িয়ে ঐতিহ্য ও স্বকীয়হীনতাকে আরো উগ্র করে তোলে। পৃথিবীর আর কোনো দেশে এমন বিদেশ-বন্দনা দেখা যায় না। যারা নিজের দেশ, ঐতিহ্য আর স্বকীয়তাকে অবহেলা করে অন্য দেশের পূজো-বন্দনায় আনত হয় তাদের দিয়ে দেশের কোনো কল্যাণ হতে পারে না।
ঠিক বলেছে স্বপ্নরাজ।জাতীয় দিবসেও বাংলাদেশিরা এত জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে না, বিশ্বকাপে যত বিদেশে পতাকা উত্তোলন করে। এমন হীনম্মন্য জাতি পৃথিবীতে আর নেই।
তাদের বোধোদয় হোক। কামনা করি, যেভাবে তারা বিদেশ-প্রেম ও বিদেশ-বন্দনায় উন্মাদ সেভাবে তারা যেন স্বদেশ-বন্দনায় রত হয়।
তাতে তোমার লাভ?
আমার প্রশ্নের উত্তরে স্বপ্নরাজ বলল, পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্ট সেই, যে নিজ দেশকে অবহেলা করে নিজের দেশে বসে পরদেশের বন্দনা করে। এরা আমার স্বপ্নকেও কুলষিত করে দিয়েছে। ছি বাঙালি ছি! 
এদের চিনব কীভাবে? খুব সহজ। এদের কেউ ব্রাআ পরে আবার কেউ ব্রাআ-ব্রাআ করে চিৎকার করে। আমাদের স্বপ্নরাজ্য হলে এসব কুলাঙ্গারদের গায়ে চিরদিনের জন্য ব্রাআ পরিয়ে দেওয়া হতো। তোমরা পারবে না। কারণ তোমাদের আত্মমর্যাদার খুব অভাব।যারা নিজেদের ঐতিহ্য নিয়ে হীনম্মন্যতায় ভোগে তাদের দেশপ্রেম কখনো খাঁটি হয় না। 

Thursday 29 March 2018

মোহাম্মদ হোসাইন প্রকৃতির কবি পরিতৃপ্তির অনুভব / ড. মোহাম্মদ আমীন


মোহাম্মদ হোসাইন প্রকৃতির কবি, পরিতৃপ্তির অনুভবে প্রোজ্জ্বল। তিনি ভেতরে উদ্গম ভেতরে বৃষ্টিপাত আবার কখনোর
মোহাম্মদ হোসাইন
রূপ প্রকৃতির বিনম্র চিঠি।বিভাজিত মানুষের মুখ তাঁর অন্তিম যাদুর ঘূর্ণন।প্রকৃতির সঙ্গে একাকার কবি মোহাম্মদ হোসাইন  নৈঃশব্দের এস্রাজে সুর পান বৃষ্টির, বৃষ্টির গান মায়বাস্তবতার ফেনিল প্রেমের ধুসর দোসরে রমণীয় হয়ে ওঠে কাব্যভুক মানুষের মতো নিপাট অবলীলার শিশুমনসারল্যে।


 মোহাম্মদ হোসাইন কবি, না মানুষ? মানুষ, না কবি? আমি তাঁর পাঠানো সাতটি বই পড়ে কোনো সিদ্ধান্তই নিতে পারিনি। বরং যতবার সিদ্ধান্ত নিতে গেছি, ততবাই বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছি। কবিতায় এমন বিভ্রান্তি না থাকলে আমি বলতাম তিনি মানুষ। না তিনি আগে মানুষ হলেও আমার কাছে প্রথমত তিনি কবি। কারণ কবিতা দিয়ে তাঁর সঙ্গে আমার পরিচয়। কবি না হলে হয়তো পরিচয় হতো না কখনো। তাঁর কবিতা বহুমুখী প্রকাশের অসংখ্যলাস্যের বিমুগ্ধপাতন।  কষ্ট বা উচ্ছ্বাসের আক্ষেপ নয়, মুগ্ধ মোড়কে মোড়া সাতটি কাব্য যেন সাতটি মহাসাগর।  একটিতে ডুব দিয়ে আর একটিতে পৌঁছার অদম্য ইচ্ছা কাব্যপ্রেমী
যে কারো মনকে নেশাতুর করে দিতে পারে। আমি শুরু করেছি ‘ভেতরে উদ্‌গম ভেতরে বৃষ্টিপাত’ দিয়ে। এই কাব্য দিয়ে শুরু করতে যাওয়ার কারণ কী এর উত্তর হচ্চে কোনো কারণ নেই, কোনো কারণ না থাকাই  সবচেয়ে বড়ো কারণ। কারণ থাকলে কারণ আর আসে না। প্রতিটা কাব্যই সাতটি মহিমা হয়ে এসেছে আমার কাছে। বুঝি না বুঝি পড়তে হবে। কিন্তু পড়তে গিয়ে দেখলাম মোহাম্মদ হোসাইনের কবিতা পড়া যায়, বোঝা যায় জানা যায়। এত সহজ নির্গমের মাঝেও চিন্তার দীপ্তি আলোকবর্ষকে ছড়িয়ে। আমি মনে করি, এখানেই হোসাইনের কবিতার আসল আকর্ষণ এবং বিরল সৌন্দর্য নিহিত। তার কবিতায় শব্দগুলি তার দিকে চেয়ে পাঠকের মনে অবিশ্রান্ত ভাবনা তুলে দিতে পারে। 

শুরুতেই জাল এবং পড়তে পড়তে সত্যি আটকে গেলাম কবিতায়। পুটি মাছ যেভাবে আটকে যায় জালে কিংবা মাছিরা মধুতে। কবির ভাবনার জালে পুটি মাছের মতো আটকে পড়া আছে কিন্তু মুক্তির তাড়না নেই। যতই আটকে যাচ্ছি মুক্তি যেন ততই বিকশিত হয়ে উঠছে। আহ! কবিতা পেলে বন্দিত্ব পরিসম্ভণময় হয়ে ওঠে। যেমন কবি মোহাম্মদ হোসাইনের ভাষায়-
“জাল ফেলি নদীতে
মাছ নয় জালগুলো হাঁস,
হাঁসগুলো চিত্রকল্প
পঙ্ক্তি মোড়ানো কবিতাসারস।” [ ভেতরে উদ্‌গম ভেতরে বৃষ্টিপাত]।

বৃষ্টির গান মায়াবাস্তবতা হোসাইনের রঙিন মন দিয়ে বিভূষিত রঙিন প্রচ্ছদের বিনোদ বরণ যেন।
মুগ্ধকর শব্দবিন্যাস। বিন্যাসের আড়ালে অপ্রাপ্তির ঝরণায় প্রাপ্তির পোখরাজ এই হলো শব্দ এই হলো উপমা, এই হলো প্রীতি, হোসাইনের কবিতার প্রীয়মাণ পোষিত আত্মাহুতি। তিনি মৃত্তিকার সন্তান, পতাকায় আটকে রাখে বুক ভালোবাসার অহর্নিশ যাতনায় এবং অভিসারের মধুর প্রতীক্ষায় মাটিতে গন্ধসুখে প্রিয়তমার ঘামের। মায়ের ছবি আঁকেন মৃত্তিকার সোঁদা গন্ধে ভালোবাসার নীলিমায় বুকে ধরে রাখার জন্য। কবিতায় তার প্রেমে প্রেমে শপথ হয়ে ওঠে দেশপ্রেম। তাই ঘুমের ভেতরে জেগে ওঠে নদী। প্রকৃতির অলিগলি ছুটে আসে তার কবিতার বনন্দিত ভাবনায়। কবির মন প্রাণ থেকে প্রাণে আলুলায়িত রমণীর আকণ্ঠ প্রহর হয়ে ওঠে জারুল গাছের সবুজের বগলে বগলে ছুটে চলা প্রজাপ্রতির মতো। অতীত আর ভবিষ্যতের সেতু বাঁধেন কবি, হতাশায় মাঝে মাঝে শব্দেরাও হেসে ওঠে-

“তবু শরৎ আসে, ফিরে ফিরে আসে সেই কাশফুল,
সেই নদী তীর, আর
অজান্তেই ভেসে ওঠে সেই মুখ
দিনমান যে বুকের ভেতর ডুকরে ডুকরে কাঁদে। [ সেই মুখ, বৃষ্টির গান মায়াবাস্তবতা]
পৃথিবীতে প্রতিদিন রাত নামে ঠিকই
সবার জীবনে নিয়ম করে
রোদ কেন নামে না যে... ” [ ভেতরে উদ্‌গম ভেতরে বৃষ্টিপাত]

তিনি জানেন রোদ কেন নামে না। এটি কথার কথা। এই যেমন আমরা বলি, বাঁচতে আর সাধ নেই। এর মানে আসলে মরে যাওয়ার ইচ্ছে নয়, বরং বাঁচার সৌন্দর্যকে আরো প্রবল মমতায় অনুভব করা।
তাঁর কাব্যসপ্তকের কবিতামালার প্রত্যেকটি লাইন ছন্দপ্রকৃতির বিমল সৌন্দর্যের নিটোল ললাট হয়ে আমার আগ্রহকে কখনো রাত কখনো সন্ধ্যা আবার কখনো বা ভোর-দুপুর কিংবা রূপোলি বিকেল করে অনন্ত আঁধার থেকে বিশাল
আধারে নিয়ে গিয়েছিল। কখনো রাগ, কখনো ক্ষোভে, কখনো হাসি আবার কখনো নির্মোক- সাপ উধাও। এই না হলে আবার কবিতা! আমার কাছে কবিতা প্রকৃতির মতো অভিমানী নারীর সুন্দর বায়না, বজ্জাত রাগের মতো ফুঁসে ওঠা অভিমান। প্রকৃতির সঙ্গে কবির প্রেমের স্বপ্নসূত্রের পানশালা ঢেকে দিয়েছে অনিন্দ্য চেনা কেউ। যাকে বার বার শুধু পেতে চাই মন, ছাড়তে চায় না একটুও। ভালোবাসায় তাকে বেঁধে ফেলেছে কবি, বিনিদ্র সাহসিকায়। তাই বলতে পারেন অবলীলায়, “ চাইলেই যাওয়া যায় না। অন্তিম যাদুর ঘূর্ণনে ব্যতিব্যস্ত থাকতে হয়, ব্যতিব্যস্ত রেখে দেয় কবি হোসাইন, না না, ভুল বলেছি, কবি হোসাইনের কবিতা। কবিকে কে চেনে,  মরে যাক কবি, তাতে পাঠকের কিছু যায় আসে না, তাদের কাছে কবিতাই মুখ্য। হোসেনও এমন মনে করেন। তাই তিনি নিজেকে ঢেলে দিয়েছেন কবিতায়।  এভাবে বেঁচে থাকতে চান কবিতায়-

“স্নেহশীলা জল, গড়ানো প্রপাতের মতো, হিমকণা বাষ্পের মতো বেদনা
হয়ে রয়। অথচ নমিত আকাশ যেমন, তেমনই নীল ছোপ চিরায়ত 
বর্ণের আকার! কে জানে, আমারও প্রতিভাও, একদিন এমনই ছিল
দিকশূন্যহীন, অর্বাচীন! আজ তাই বারেবারে মানুষের কাছেই ফিরে ফিরে 
আসি - -।” [ মানুষের কাছে. অন্তিম যাদুর ঘূর্ণন]।

কবির কবিতায় প্রকৃতি আছে প্রেম হয়ে। পঙ্ক্তিতে বাক্যগুলি নিবিড় ভালোবাসায় রঞ্জিত। অনুভবের অনুভাবনাগুললো  অনুত্তাপ উষ্ণতার শিখা হয়ে পাঠকে আকড়ে থাকে, পাঠককে আকড়ে রাখে যেন বই নয়, কবিতা নয়;  খুব কাছ থেকে প্রকৃতিকে নিবিড় মমতায় উপভোগ করা।  প্রেমিকার বিশুদ্ধ কপোলে সমুগ্ধ চুম্বন লেফটে দেওয়ার মতো অবাধ্যে 
 “-- সন্ধ্যের আকাশ আর আমি নিরিবিল কথা বুনে যাই, সেলাই করা হাওয়া
কতবার যে বুকে এসে পড়ে, কতবার সে সঘন চুমু খায়।” [ সঘন হাওয়া, বিভাজিত মানুষের মুখ]।

 কোন কাব্যটি ভালো লেগেছে? আমার  ছেলের এই প্রশ্নের উত্তরে একটি কাব্য তুলে দেওয়ার মতো বুদ্ধি
আমার জাগল না, সব কাব্য পড়ার পরও। কেন? আমাকে আমি প্রশ্ন করলাম। উত্তর এল, তাও কাব্যময়। কবিতা আসলে আমি বুঝি না। তাই সবসময় এটি আমার কাছে নারীর মতো রহস্যময় মনে হয়। হোসাইনের কবিতা অনুপম মহিম এবং নিরূপম মগ্নতার সৌধ। যেন উচ্চৈঃস্বরের ব্রহ্মফটকে উদীর্ণ উদ্বেল মহাসাগরের ঢেউয়ে ঢেউয়ে ফেনিল প্রশান্তিতে অসীম করে দিতে চয়িত হয়েছে সসীমকেএখনে কবি হোসাইন তাঁর উন্মীলিত জীবনের চাওয়া-নাপাওয়া বিষয়গুলিকে অবহেলা করে ভাবনার অন্তরালে সঁপে দিয়েছেন নিজেকে। তাই কোনো দুঃখ তাকে অবনমিত করতে পারে না। যতই নৈঃশব্দ্য বলা হোক না কেন, হোসাইনের প্রতিটি কবিতায় শব্দনিপুণ এস্রাজ। তিনি কবিতার মতো এগিয়ে চলেন সর্বজীবের কল্যাণে।  কবির ভাষায় -
“আজন্ম লালিত স্বপ্নগুলো বুক থেকে বুকে চোখ থেকে চোখে
অবিরল ছড়িয়ে দেবো মিহিদানা করে রৌদ্রের পাখনায়।” [ নৈঃশব্দ্যের ইন্দ্রজাল, নৈঃশব্দ্যের এস্রাজ]

কবি হোসাইনের আর একটি বিরল প্রতিভা পদ্যয়ন। তার কলম বাক্য পেলে  শব্দগুলিকে কবিতার সজ্জায় সজ্জিত করে দেয় বিকশিত নারীর উপাত্যাকার মতো।  কী অবলীলায় তিনি গদ্যকে কবিতার চেয়ে উষ্ণ
করে দিয়েছেন প্রিয়তমার ওমের মতো বিরল গন্ধে। এখানে কবি বর্তমান সমাজের বাস্তবতা, মানুষের পার্থিব লোভ, আর্থিক গ্রাসতাকে ভালোবাসার কাছে কীভাবে বলি হতে হয় আবার কীভাবে অর্থ মৃত ভালোবাসাকেও জীবন দেয়, তা খুব করুণ কিন্তু মাধুর্যমণ্ডিত বাক্যে তুলে ধরেছেন। কবির ভাষায়-

“তোমার বাবা মাকে বলবো আমি সেই বেকুব কবি, যাকে একদিন দূর 
দূর করে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন গেটের বাইরে থেকে ‘আমি সেই’। সেদিন
 কিন্তু তুমি আমাকে ইগ্নের করতে পারবে না, সুতুপা। আর তোমার 
বাবা-মাও নিশ্চয় আমার মত অমন উদীয়মান, সম্ভাবনাময়, পাওয়ারফুর রাজনীতিককে হাতছাড়া করতে চাইবেন না, কী বলো?”[একটি কবিতার খসড়া,  নৈঃশব্দ্যের এস্রাজ]

কবির মতো জীবন এক অবিদিত শূন্যের ঘের। যেখানে চারদিক অজানা রহস্যের নৃশংস পঙ্কিলতা, তবু জেগে ওঠে কোমল কমল।কবির ভাষায়, “বিকেলের নিভে যাওয়া আলো অবিমিশ্র জীবন সংবেদ।” এটাই প্রকৃতি, এটাই প্রেম। এখানে জেগে থাকে জীবনের আজীবন প্রতীতি। সিলেটের সবুজ প্রকৃতির মতো রঙিন মনে তার লালচে মৃত্তিকার অবয়ব যেন সব মানুষকে ভালোবাসায় ভালোবাসায় একাকার করে দিতে এসেছে। কবি তাই বলে ওঠেন -

“চা পাতার দেশে এ যেন আরেক সুন্দরবন
চারপাশে সার সার কী হিজল, তমাল
অর্নের, কদমের কী মায়াময় নাম।” [সোয়াম্প ফরেস্ট, রাতারগুল. রূপ প্রকৃতির বিনম্র চিঠি]।

মোহাম্মদ হোসাইন কবি, এটাই আমার সঙ্গে তার  যোগসূত্র। রবীন্দ্রনাথকে যেমন আমি দেখিনি, তাঁকেও তেমন দেখিনি। তবে তিনি এখনও শরীর ধারন করে আছেন, রবীন্দ্রনাথ নেই এটাই ভৌত পার্থক্য।
তিনি আমার কাছে সাতটি কাব্য পাঠিয়েছেন। তার কাব্যগুলো পড়ে আমি কতটুকু বুঝতে পেরিছি জানি না। শুধু মনে হচ্ছিল আমার বুঝতে ভুল হচ্ছে কোথাও, কিন্তু শেষে যখন তার কাব্য ‘ভুল হচ্ছে কোথাও ভুল হচ্ছে’ পড়লাম, তখন মনে হলো- ভুল নয় ফুল। ভুল আছে বলেই জীবন এত সুন্দর। কবি তাই ভুল হচ্ছে জেনেও ভুলের জায়গা খুঁজেন না, ভুল করে যান ফুলের আসায়। কিছু কিছু বানান ভুল ছাড়া হোসাইনের কাব্যে তেমন কোনো ত্রুটি চোখে পড়েনি। তার লেখা ‘ভুল হচ্ছে কোথাও ভুল হচ্ছে’ কাব্যের কয়েকটি কবিতার পড়ার পর আমার লেখা ছোটো দুটি লাইন মনে পড়ে গেলে-
“ভুল থেকে ফুল, ফুল থেকে বৃক্ষ
                          তাতেই জীবন সবুজ, মহিম অন্তরীক্ষ।”[ ড. মেহাম্মদ আমীন, নির্মৎসরী]

আমি পড়লাম কবি মোহাম্মদ হোসাইনকে, পড়লাম তার কবিতা, দেখলাম শব্দসজ্জার বিচক্ষণ কৌশল। সম্পূর্ণ ভিন্ন আঙ্গিকে ভিন্ন দ্যোতনায় লেখা কবি মোহাম্মদ হোসাইনের কাব্য ‘ভুল হচ্ছে কোথাও ভুল হচ্ছে’ পড়ার পর আমাকে তৃপ্তির অবশ আলো ঘিরে ধরল।হোসাইনের সহজ সরল প্রকাশের মাঝে মুগ্ধ দর্শনের দৈবিক চাঞ্চল্য আমাকে আবার সরস করে দিল জীবনের কলহাস্যে। কবি মোহাম্মদ হোসাইনের ভাষায়, 
“একদিন সূর্যকণার সাথে সে নাম মিশে রবে, ঘাসে ঘাসে
বিস্ফোরিত হবে নিটোল অভ্রকণা, মর্মকথা বীজাণুর--”[নষ্ট দোতারা, ‘ভুল হচ্ছে কোথাও ভুল হচ্ছে’ ]

(খসড়া)