Saturday 6 October 2018

স্ত্রীদণ্ড বনাম মৃত্যুদণ্ড / ড. মোহাম্মদ আমীন


“এমনিতে কিছুটা পুরনো কিন্তু এখনো অনেক মাইল ছোটার ক্ষমতা রাখে। আকার-প্রকার ঠিকই আছে, রংও চটেনি বিন্দুমাত্র। মাঝেমধ্যে একটু কানফাটা চিৎকার করে তবে চকচকে ধাতুর কোনো জিনিস দিলে এদম চুপ হয়ে যায়, নিঃশব্দে চলে। এত ভালো, তারপরও বিক্রির কারণ? যা পাওয়ার, তা আমার পাওয়া হয়ে গেছে। আমার ইচ্ছা,
বলুন তো এটি কীসের বিজ্ঞাপন?
সবাই বলবেন, গাড়ি বিক্রির বিজ্ঞাপন।
আসলে গাড়ি বিক্রির বিজ্ঞাপন নয়, স্ত্রী-বিক্রির বিজ্ঞাপন। তেত্রিশ বছর বয়স্ক সিমন ও-কান নিজের স্ত্রী-বিক্রির জন্য বিজ্ঞাপনটি দিয়েছিলেন। পেশায় তিনি ইয়র্কশায়ারের ওয়েকফিল্ডের প্রকৌশলী। বিজ্ঞাপন দেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে স্ত্রীর দাম উঠে যায় ৬৬ হাজার পাউন্ড, মানে বাংলাদেশি ৯৯ লাখ টাকা। কী বুঝলেন? আপনার স্ত্রী আপনার কাছে যতই ফেলনা হোক না কেন, অন্যের কাছে তার দাম সহস্র লাখ টাকা।
সিমন ওকানের স্ত্রী লিয়ান্ড্রা এটি দেখে ওই ওয়েব সাইটে ঘোষণা দিয়ে বসেন, আমি তাকে খুন করব।
কিন্তু কেন এমন বিজ্ঞাপন?
অফিস থেকে বাড়ি ফিরলে সাতাশ বছর বয়স্কা স্ত্রী লিয়ান্ড্রা শুধু খিচ খিচ করতেন। শরীর-মন খারাপ থাকলে আরো বেশি অবহেলা করতেন। ফিরতে দেরি হলে বলতেন “কোন মাগির কাছে ছিলে এতক্ষণ”। তাড়াতাড়ি এলে বলতেন, “চাকরি কি চলে গেছে? যাবেই তো, তোমার মতো অপদার্থ মা-বাবার অপদার্থ ছেলেকে কোন বেআক্কেল চাকরিতে রাখবে।” এসব শুনতে শুনতে ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে সিমন ও-কান পোস্টটি দিয়েছিলেন (ছবি দেখুন)। পোস্টের সঙ্গে লিয়ান্ড্রার একটি ছবিও দিয়েছিলেন। ইচ্ছুক ক্রেতারা অনুরোধ করেছিলেন নতুন কিছু ছবি দেওয়ার। এরপর কী হয়েছিল আমার জানা নেই। তবে ও-কান ওখান থেকে হাওয়া হয়ে গিয়েছিলেন।
স্ত্রীদের অত্যাচার নিয়ে স্বামীদের অভিযোগ নতুন নয়। নারী অধিকার অধিকমাত্রায় সুরক্ষিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অভিযোগের সংখ্যা, প্রকৃতি ও মাত্রাও বাড়ছে। স্বামীদের অভিযোগ, পুরুষদের অত্যাচার হতে স্ত্রীদের প্রতিকার পাওয়ার অনেক আইন আছে কিন্তু স্ত্রীদের অত্যাচার হতে পুরুষদের প্রতিকার পাওয়ার একটা আইনও নেই। কিন্তু পুরুষেরাই তো আইন প্রণয়ন করেন, তাহলে কেন পুরুষগণ তাদের নিজেদের সুরক্ষার জন্য আইন করেন না?
অক্সফোর্ডে পরিচালিত একটা গবেষণায় এর কিছুটা উত্তর পাওয়া যায়।
গবেষণায় বলা হচ্ছে -- নারীরাই পুরুষ নির্যাতন-বিরোধী কোনো আইন হতে দেয় না। পুরুষ আইন প্রণেতাগণ আইন প্রণয়ন করতে যাবার আগে স্ত্রী-কন্যা, মাবোন প্রমুখ-সহ নানা নারী বন্ধুদের নির্দেশ-প্ররোচনা বা আদরপ্রসূত অতিরিক্ত আবেগে বাধ্য হয়ে এমন আইন করে বসেন। কিন্তু যখনই কোনো আইন প্রণেতা তার স্ত্রীর অত্যাচারের শিকার হয়ে প্রতিবাদ করতে যান তখন অন্য পুরুষগণও একইভাবে তাড়িত হন। ফলে স্ত্রীর অনুকূলে এবং স্বামীর প্রতিকূলে আরো শক্ত আইন প্রণীত হয়ে যায়।
স্ত্রীদের অত্যাচার থেকে প্রতিকার পাওয়ার প্রত্যাশায় পুরুষ ও পরিবারের স্বার্থরক্ষার উদ্দেশ্য নিয়ে গঠিত ‘সেভ ইন্ডিয়ান ফ্যামিলি ফাউন্ডেশন’ নামের একটি সংস্থা মরণপূর্ব শ্রাদ্ধ করার ডাক দেন। ২১০৮ খ্রিষ্টাব্দের ১২ই সেপ্টেম্বর ‘মনের ডায়েরি’ নামের একটি অনলাইন পত্রিকায় খবরটি ছবি-সহ প্রকাশিত হয়।
খবরে প্রকাশ, দজ্জাল স্ত্রীদের হাত থেকে রক্ষা পেতে বারাণসীতে গিয়ে শ্রাদ্ধ শান্তি করলেন ১৫০ জন পুরুষ। ‘সেভ ইন্ডিয়ান ফ্যামিলি ফাউন্ডেশন’ এবং সংস্থার সদস্য অমিত দেশপাণ্ডে এই শ্রাদ্ধকাণ্ডের পরিকল্পক। তিনি দেশের সকল ‘অত্যাচারিত’ স্বামীদের ভয়াবহ বিবাহিত জীবনের শ্রাদ্ধ সম্পন্ন করার জন্য আহ্বান জানান। তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে পুরুষগণ মরণপূর্ব শ্রাদ্ধ সম্পন্ন করলেন। ভিন্ন ভিন্ন বয়সের এই স্বামীরা ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসেছেন। বয়স ও এলাকা ভিন্ন হলেও সবার উদ্দেশ্য ছিল অভিন্ন এবং তা হলো-- বারাণসীর পবিত্র ভূমিতে স্ত্রীদের পারলৌকিক কাজ সম্পন্ন করা। তবে তাদের কারো স্ত্রী মারা যাননি; সবাই জীবিত এবং বেশ সুস্থ। তাহলে পারলৌকিক কাজ সম্পন্ন করার কারণ কী?
অমিত দেশপাণ্ডে বলেন, বছরের পর বছর ধরে এই পুরুষরা স্ত্রীদের নৃশংস অত্যাচারের শিকার হয়েছেন। এবার তাঁদের মুক্তির পালা। পিণ্ড দিয়ে, পিশাচিনী মুক্তি পূজা সেরে, গঙ্গায় স্নান করে তাঁরা বিবাহিত জীবনের ভয়ঙ্কর স্মৃতি থেকে মুক্ত হতে চান। ‘বিষাক্ত নারীবাদ’ ভারতীয় বিবাহিত পুরুষের জীবনকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। এই শ্রাদ্ধকাণ্ড সেই
‘সেভ ইন্ডিয়ান ফ্যামিলি ফাউন্ডেশন’-এর সদস্য রাজেশ ভাখারিয়া বলেন, ভারতীয় আইন মূলগতভাবে পুরুষের
শুধু ভারতে নয়, ইউরোপ আমেরিকাসহ পৃথিবীর বিভিন্ন উন্নত দেশেও স্বামীর বিরুদ্ধে স্ত্রীর অত্যাচারের অভিযোগ পাওয়া যায়। কিন্তু প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তোলার সাহস পায় না। কারণ প্রত্যেকের ঘরে স্ত্রী আছে, আছে কন্যা, মা-বোন। ফলে এসব বিষয়ে প্রতিকার করার সাহস খুব কম পুরুষই পায়। এ বিষয়ে প্রায় সবার জানা একটা কৌতুক দিয়ে প্রবন্ধটা শেষ করব।
একরাতে সম্রাট তাঁর ছোটো রানির কপালে আদর দিতে দিতে বললেন, আমি আপনার বাবাকে দাক্ষিণাত্যের এবং আপনার বড়ো ভাইকে উত্তর প্রদেশের রাজা করে দিলাম। আপনি আপনার চাচাত বোন রুবিকে আমার করে দিতে রাজি হলেন না।
রানি : যদি রুবিকে আপনার হাতে তুলে দিই কী করবেন?
সম্রাট : আমি আপনার সব কথা শুনব। আমার মতো স্বামী আপনি পাবেন না।
রানি : সম্রাট হোক বা ফকিন্নি হোক সব স্বামীই বউয়ের কথা শোনেন। সত্যবাদীরা স্বীকার করেন মিথ্যুকেরা করেন না।
সম্রাট : রানি আপনার কথা ঠিক নয়। আমার রাজ্যে হাজার হাজার সাহসী বীর আছে। তারা কেউ বউকে ভয় পায় না।
রানি : বউকে ভয় পায় না, এমন একজন লোকও যদি পান তাহলে আমি রুবিকে আপনার হাতে তুলে দেব।
পরদিন সম্রাট ঘোষণা করে দিলেন, রাজ্যের যেসব লোক তাদের স্ত্রীকে ভয় পায় না তাদের সবাই আমার ডান পাশে এবং যারা তাদের স্ত্রীকে ভয় পায় তারা আমার বাম পাশে গিয়ে দাঁড়াবে। রাজা-প্রজা এবং উজির-নাজির হতে শুরু করে ভিক্ষুক পর্যন্ত বিবাহিত সবাইকে এই আদেশ পালন করতে হবে। যদি কেউ না আসে কিংবা এলেও প্রতারণা করে উলটো পাশে দাঁড়ায় তাহলে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে।
ধার্য তারিখ চলে এল।
সম্রাট ও তাঁর বামপাশে রানি সিংহাসনে সমাসীন। লোকজন আসছে আর আসছে। কিছুক্ষণের মধ্যে সম্রাটের বামপাশ জনসমুদ্র হয়ে গেল। রাজ্যের সব উজির-নাজির, রাজা, বীর সবাই বামপাশে, ডান পাশে কেউ নেই। সম্রাট চোখে অন্ধকার দেখছেন। এসময় এক চিকন লোক ধীরপদে সম্রাটের ডানপাশে গিয়ে দাঁড়ালেন। সম্রাট তা দেখে রুবির লোভে স্বস্তির নিঃশ্বাস দিয়ে রানির দিকে তাকালেন।
সম্রাট খুশিতে উৎফুল্ল হয়ে চিকন লোকটিকে বললেন, আমার রাজ্যের রাজা-উজির, বীর-বাহাদুর সেনাপতি-মন্ত্রী সবাই বামে তুমিই কেবল ডানে। সত্যি কী তুমি বউকে ভয় পাও না?
লোকটি বলল, হুজুর আমার বউ আমাকে ডান দিকে দাড়াতে বলেছে।
কেন?
বাম পাশে অনেক লোকের হুড়োহুড়ি হবে এবং আমার চিকন শরীর ওই চাপ সহ্য করতে পারবে না। তাই।
সম্রাট: এজন্য যে তোমার মৃত্যুদণ্ড হবে এটি জানো না।
জানি হুজুর।
তারপরও ডানে দাঁড়ালে যে?
হুজুর স্ত্রীদণ্ড মৃত্যুদণ্ডের চেয়েও ভয়াবহ।
বিপক্ষে। এ দেশে পশুকল্যাণের জন্যও মন্ত্রণালয় রয়েছে, কিন্তু পুরুষের প্রতি অন্যায় রোধের কোনো ব্যবস্থা নেই। প্রতিবছর ভারতে দাম্পত্য কলহে প্রায় ৯২,০০০ পুরুষ আত্মহত্যা করেন, অন্যদিকে দাম্পত্য কলহে আত্মঘাতী স্ত্রীর সংখ্যা মাত্র ২৪,০০০। ভারতীয় পেনাল কোডের ৪৯৮(এ) ধারার অপব্যবহার ঘটিয়ে হাজার হাজার পুরুষের জীবন নষ্ট করে দিচ্ছেন দজ্জাল মহিলারা।

বিষের বিরুদ্ধে শক্তি সঞ্চয়ের উদ্দেশ্যে করা হচ্ছে। শ্রাদ্ধ সেরে তাঁরা ‘পিশাচিনী মুক্তি যজ্ঞ’ করে গঙ্গায় স্নান করবেন। কারণ তাঁদের স্ত্রীরা দজ্জাল এবং এই ‘দজ্জাল’ স্ত্রীরা তাঁদের জীবন দুর্বিষহ করে তোলেছেন।

আমার অভিজ্ঞতা অন্যেরও হোক।” এটি ‘ই বে’ নামের অনলাইন সাইটের পুরনো গাড়ি বিক্রি বিভাগে প্রকাশিত একটি বিজ্ঞাপন।