লিয়াকত আলী, তিনি আমার ভার্চুয়াল ফ্রেন্ড।
মুখোমুখি দেখা হয়নি কখনও, কিন্তু মাঝে মাঝে ঢুঁ মারি তার ফেইসে। ফেস ইজ দ্যা
ইনডেক্স অব মাইন্ড। এ আয়নায় বিলোকিত হয়ে ওঠেন তিনি- তাঁর চিন্তা,
চেতনা, অনুভব আর
অনুভূতির মাত্রিকতা। তিনি সাহসী চিন্তার ধারক, বাকস্বাধীনতার সমর্থক এবং আপন মনে
বিকশিত একজন অনুপম দার্শনিক। তাই মানুষকে নিজের গভীরতা দিয়ে যাচাই করার অনুপম
পারঙ্গমতা তাঁর মজ্জাগত। “সত্যিই এই ধরণীটা বড়ই অদ্ভুদ! কিছু মানুষকে আমার ভালো লাগত, এখন আর তেমন ভালো লাগছে না। এক সময় খুবই ভালো বন্ধু বন্ধু মনে হতো এখন
তো আর তেমন মনে হচ্ছে না। আমার এমনটা হচ্ছে কেন? হু, যদি প্রচণ্ড
মিথ্যা কথা বলতে পারতাম! এই বুকের যন্ত্রণাটা বোধ হয় কিছুটা হলেও
প্রশমিত হতো।” আমার কথা নয়, লিয়াকত আলীর কথা, তিনি প্রাক্তন এমপি, একজন বিদগ্ধ
রাজনীতিবিদ। তবে তাঁর ভাগ্য খারাপ তিনি সত্যের সাধক, মিথ্যা বলতে পারেন না। নইলে তিনিও
অন্য অনেকের মতো সত্য-মিথ্যার জোড়াতালি দেওয়া আদর্শ নামের নাদর্শের রাজনীতির
নীতিহীন মাঠে ইচ্ছেমতো দাবড়িয়ে বেড়াতে পারতেন, বলদ শ্রেণির কিছু মব্লদকে। কিন্তু
নীতি-আদর্শে অনুগত থাকার তীব্র আকাঙ্খা তাঁকে নীতিভ্রষ্ট হতে দেয়নি, তাই তিনি
নীতিহীন রাজনীতির মাঠে অস্পৃশ্য। এ অস্পৃশ্যতা তাকে করেছে মহান, আমাদের করেছে
গর্বিত। এমন কিছু কিছু মানুষ এখনও আছেন, আছেন বলেই টিকে আছে দেশ, পৃথিবী, সমাজ,
মানুষ আর মানবতা। রাজনীতি সম্পর্কে তার বিশ্লেষণ কত চমৎকার :
“শাসকেরা সাধারণত একটু কম দেখে
স্বৈরাশাসকেরা প্রায় তো অন্ধ হয়ে যায়। কিছুই দেখে না
লিয়াকত আলী একজন দূরদর্শী মানুষ। তবে তিনি একজন
মানুষের পক্ষে যতটুক সম্ভব, ততটুক নির্লোভ। জীবনকে তিনি দেখেছেন নানাদিক হতে বহুধা-বিভক্ত
ছান্দিকতায়। ছাত্রজীবন হতে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে নানা অসংগতির বিরুদ্ধে
রুখে দাঁড়ানোর মাধ্যমে তাঁর রাজনীতিতে প্রবেশ। পরিবার প্রথমদিকে এটি সহজভাবে মেনে
নিতে না পারলেও লিয়াকতের সাহসী সদিচ্ছা আর নির্যাতিতের পক্ষে বলিষ্ঠ অবস্থানের
স্নিগ্ধ পরশকে কখনও অবহেলা করতে পারেননি। বরং আড়ালে গর্ববোধ করেছেন- “তাঁদের
সন্তান মানুষের উপকারে কাজ করছে।” এখনও, এ পরিণত বয়সেও তিনি নিজের নীতিতে অটল,
অবিচল নিজের চেতনায় যা কিছু সুন্দর অনুরক্ত তার প্রতি। অন্যায়-অবিচার দেখলে লজ্জায়
আঁতকে এবং ঘৃণায় উপড়ে দিতে চান সব অবিচার। বিরক্তিতে বজ্রকঠোর মগ্নতায় নেচে উঠে
তার লেখনী :
সত্যি সত্যিই বিচিত্র এই ধরণী
বিস্ময়ে চেয়ে চেয়ে দেখলাম
এই তল্লাটেরই বিচরণরত প্রাণী
মুখোশ ওদের খসে পড়ে গেল!
কদাকার কদর্য্য সব মুখচ্ছবি। (মুখোশ ওদের খসে পড়ে গেল)
রাজনীতিবিদগণ সাধারণত দেখেন আগামী নির্বাচন, পরবর্তী ভোটার কিন্তু
রাজনীতিবিদ হলেও লিয়াকত আলী অন্যরকম, তিনি দেখতেন আগামী প্রজন্মের কল্যাণ। আগামী
নির্বাচন তাকে নির্বাচনে জয়ী হয়তো করবে কিন্তু আগামী প্রজন্ম পুরো জাতিকে, পুরো
দেশকে করবে জয়ী। এটাই ছিল তার দর্শন। অনেকের
সঙ্গে তাঁর এ দর্শনের ঘোর বিরোধ ছিল।
তারা বলতেন, বাদ দেন আগামী প্রজন্ম, নির্বাচনে জয়ী হওয়াই আমাদের লক্ষ্য। শুধু ক্ষমতার
জন্য নির্বাচনে জয়ী হওয়ার জন্য জনসেবাকে তিনি মনে করতেন, জবাই করার পূর্বে পশুকে
মোটাতাজাকরণ ক্রিযার সঙ্গে। এ মতের সঙ্গে তিনি কখনও এক হতে পারেননি। এটি হয়তো তাঁর
রাজনীতি হতে দূরে সরে যাওয়ার অন্যতম একটি কারণ। এটি আমার নিছক অনুমান,
সত্য না-ও হতে পরে। ছাত্রজীবনে এমন অনেক স্মৃতি তাঁর আছে যা এখনও এলাকার মানুষের
কাছে শ্রদ্ধানত বিনম্রতায় স্মরণীয়। আবার রাজনীতিতে আসার আহবান করেন। কিন্তু তিনি
বিরক্ত দেশের বর্তমান রাজনীতির কূটচালে। তার মতো একজন পরিচ্ছন্ন মানুষের পক্ষে
পঙ্কিলতার এমন স্রোতে গা ভাসিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়। ছাত্রজীবন থেকে লিয়াকত আলী ছিলেন
সাহসী, নীতিবান। তাঁর নীতি আদর্শের কাছে অনেকেই ছিল নতজানু। কখনও আদর্শের সঙ্গে
আপোষ করেননি, আপোষ করাতে পারেননি কোনোভাবে :
আমি মানি না কারো বশ্যতা
আমারে বশ করার মত নাই
কোন রঙ্গিন দেব দেবতা।
আমারে বশ করার মত নাই
কোন রঙ্গিন দেব দেবতা।
বিশেষ করে নির্যাতিত সাধারণ মানুষের পক্ষে তাঁর অবস্থান ছিল হিমালয়ের
মতো অনড়। তাই তিনি দ্বিধাহীনচিত্তে বলতে পারেন,“ ব্যক্তিত্বহীন, আত্মসন্মানহীন, মেরুদণ্ডহীন, চামার, চামচামিতে অভ্যস্থ
ব্যক্তি, কবি হোক, সাহিত্যিক হোক, লেখক হোক, আমলা হোক, মাস্টার হোক, শিক্ষক হোক,
প্রফেসর হোক, মসজিদের ইমাম হোক, রাজনীতিবিদ হোক, নেতা হোক, মন্ত্রী
হোক, প্রধানমন্ত্রী হোক, রাষ্ট্রপতি হোক, আমার পিতা হোক, আমার সন্তান হোক, ওদের
আমি ভীষণভাবে অপছন্দ করি। ওদের সাথে সম্পর্ক, সান্নিধ্য বন্ধুত্ব আমাকে পীড়া দেয়,
বিমর্ষ করে, লজ্জিত করে।”
সংগতকারণে এত বেশি নীতিভ্রষ্টতার জঞ্জালে কলঙ্কিত সাংঘর্ষিকতা নিয়ে
তিনি রাজনীতি করতে পারছিলেন না। সাহিত্য-সংস্কৃতি ও নান্দনিকতায় বিমুগ্ধ ও আদর্শ
উজ্জীবিত লিয়াকত আলীর পক্ষে তা কখনও সম্ভবও ছিল না। তাঁর মন ছিল কবিতার মতো অপলক,
সুরের মতো নিষ্পলক, দিগন্তের মতো দিগন্তহীন আর সবুজের মতো মায়াময়। তিনি চলার পথে
অনুক্ষণ অনুসরণ করতেন জীবনবোধের লালিত্য, বিশ্বভ্রাতৃত্বের অনুভব এবং সার্বজনীনতার
মৃদঙ্গ। তাই তাঁর কবিমন বাঙ্ময় থাকত সুন্দরে, সুকোমল নান্দনিকতার প্রশান্তিময়
কলহাস্যে এবং আগামী প্রজন্মের স্বপ্নীল মাধুরিমায় :
গলা ছেড়ে ধর দিন বদলের গান
উষালগ্ন আর তো বেশীদুরে নয়।
নতুনদিনে নতুন সুপ্রভাতে
ঝলমল নতুন রবির
হবে আগমন।
রাজনীতিবিদ হয়েও তিনি মূলত কবি এখন পুরোটাই কবিতার মানুষ। কবিতার মতো
শিশু, শিশুর মতো
তাঁর অন্তরাত্মা। কবিতা এখন তাঁর পুরোপুরি অনুগত, তাঁর কথায় চলে
শব্দেরা। কবিতার শব্দে, ছন্দে বন্ধে আকুল হয়ে উঠে তাঁর প্রকাশ, প্রজ্জ্বলিত হয়ে
উঠে দ্রোহ, প্রেম, ভালবাসা আর একনিষ্ঠ উচ্ছ্বাস। কবিতার মতো নিষ্পাপ ভাবুলতায় তিনি
পরিশুদ্ধ, শব্দের মতো নির্ঝর তার মৌনতা। এমন কমনীয় মানুষের জন্য প্রয়োজন অনিমেষ
পরিবেশ। কবিতার মাধ্যমে কবিতায় কবিতায় তিনি হয়েছে বিদগ্ধ, পরিশুদ্ধ। লিয়াকত আলীর
ভাষায় :
“কবিতা আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে, কবিতাস্নাত প্রাণ পবিত্র শ্বেত কপোত কপোতীর মতো
শ্রাবণের সাদা মেঘ হয়ে আকাশে আকাশে ভাসে।” কবিতার মতো এমন পবিত্র মন নিয়ে
তাঁরপক্ষে রাজনীতির নোংরা মাঠে শঠতার বল নিয়ে খেলে যাওয়া কখনও সম্ভব ছিল না। তিনি
ছিলেন বুদ্ধি হওয়ার পর থেকে সত্যসন্ধানী ও পরিশীলিত মনের সাহসী মানুষ। শিক্ষা বিস্তারের
মাধ্যমে মানবিক গুণাবলী সম্পন্ন এক আদর্শ প্রজন্ম ও বিদর্শ জাতি সৃষ্টিতে উদগ্রীব।
জীবন ও কবিতা তার কাছে অবিচ্ছিন্ন, অভিন্ন দেহের দ্যোতনায় আপ্লুত। এ প্রত্যয় খুঁজে
পাই তারই লেখা কবিতায় :
এক খণ্ড স্বর্গ খোঁজ! এসো বাছা।
শুভ্র ফেনামণ্ডিত এক মগ শীতল সোনালি বিয়ার
সাথে একটি কবিতার বই। (এক খন্ড স্বর্গ খোঁজ! এসো বাছা)
তিনি আকাশ নন শুধু,
আকাশের প্রান্তরে ছুঁয়ে যাওয়া বদান্যতার তিল তিল আবেশ। জীবনের রুক্ষ মাঠে থেকেও
অবিশ্বাস্য এক স্বকীয়তায় আয়ত্ত করতে সক্ষম হয়েছেন মেঘমেদুর চেতনায় ঢেউয়ের মতো উথলে
উঠা এক বিনম্র কাব্যরথ। এ রথে ভেসে পৌরাণিক গল্পের মতো ভেসে গিয়েছেন অতীত হতে
বর্তমান হয়ে অনেক দূরে, সুদূর সুদূরে। সেখান থেকে নিয়ে এসেছেন কাব্যের স্নাত কায়া,
দলিতের জন্য বুকভরা ভালবাসা আর প্রাণভরা মায়া :
বন্ধু, তোমার বাগানেও
সুবাসিত লাল গোলাপ ফুটবে
এক প্রত্যুষে সেই গোলাপ থেকে
স্ফটিকে মত সচ্ছ শিশির ফোটা
ঝরে ঝরে পড়বেই।-
রাজনীতির মতো ধর্মেও তিনি উদার, অসাম্প্রদায়িক।
তাঁর কাছে মুক্তচিন্তা ও বাকস্বাধীনতা মানুষের সত্যিকার বিকাশের অনিবার্য হাতিয়ার।
ধর্মীয় স্বাধীনতা ও মুক্তচিন্তার প্রকাশকে তিনি মানব সভ্যতার ধ্বজা মনে করেন। তাঁর
ভাষায়, “কেউ যদি ধর্মের পক্ষে লিখতে পারে, বলতে পারে, যুক্তি দিতে
পারে. তাহলে, অন্য কেউ ধর্মের বিপক্ষে যুক্তি দিতে পারবে না
কেন? বলতে পারবে না কেন? অবস্থান নিতে পারবে না কেন? কোনো ধর্ম তো
চিরস্থায়ী কোনো কিছুই নয়।ধর্মের সাথে মানুষের সম্পর্ক পরিবর্তনশীল।একটু
চিন্তা করে দেখত, একজন মানুষের সাথে ধর্ম সম্পর্ক এক সেকেন্ডের কম সময়ের
দুরত্বের।তুমি এখন মুসলিম আছ, এক মিনিট পর যদি তুমি কালেমা বিশ্বাস না কর, তুমি কি
আর ধর্ম আছ? তুমি কি আর মুসলিম আছ?” তবে তিনি ধর্মহীন নন, ধর্মভীরু। ধর্মের প্রতি
রয়েছে মরমীয় টান। জন্ম-মৃত্যু ও ইসলামের পঞ্চ স্তম্ভের প্রতি পরম অনুগত এবং অগাধ
সম্মান পবিত্র কোরআনে :
কখন যে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হল, গোধুলির লগ্ন পার
হল।
দুর থেকে ভেসে আসা মোয়াজ্জিনের সুরেলা কন্ঠে
ধ্বনি, প্রতিধ্বনি
আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর, ক্ষীণ থেকে ক্ষীণ
হয়ে, থেমে গেল।
প্রিয় মানুষের অস্ফুষ্ট গলা—এই উঠ চল এখন বাড়ী
যাই। (পায়ে পায়ে চলা হল অনেক পথ।)
বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে রয়েছে তার প্রবল আস্থা, বিশ্বাস
এবং হৃদয় নিংড়ানো নিবিড়তা। তিনি তাঁর নীতি আদর্শের মতো দেশ, জাতি, স্বাধীনতাযুদ্ধ
ও জাতীয় ঐতিহ্য নিয়েও কোনো কিছুর বিনিময়ে আপোষ করতে নারাজ। বাঙালি জাতির
প্রত্যেকটা সংগ্রামে তাঁর রয়েছে অকুণ্ঠ শ্রদ্ধা। তাই কেউ যদি মুক্তিযুদ্ধ ও তার
গৌরবজনিত কোনো বিষয়ে কোনো অপমান করে, তিনি আর ঠিক থাকতে পারেন না। গর্জে উঠে তাঁর
কলম, বিপ্লবী হয়ে উঠে তাঁর কবিতা, যুদ্ধ হয়ে উঠে শব্দেরা :
মীমাংসিত ইতিহাস মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লক্ষ শহীদ
তথ্য নিয়ে কীভাবে উঠাতে পারলে প্রশ্নের বান?
তুমি বিদেশি প্রভুর পা-চাটা কুকুর, জাতীয় বেইমান। (মীমাংসিত ইসহাস
মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লক্ষ শহীদ)
বাংলা ভাষার প্রতি তিনি পরমভাবে সিক্ত একজন চির
বাঙালি। নিউইয়র্কে থেকেও তিনি পুরোদস্তর এখনও বাঙালি। বাংলা ভাষায় বলেন পরিবারের
সবার সঙ্গে। কবিতা লেখেন বাংলায়, বাংলা ভাষার প্রচার-প্রসারে বিদেশের মাটিতে
সংগঠিত করেন বাঙালিকে। বাংলা ভাষার মমতায় তাঁর হৃদয়ে ছোট কোণটা নিমিষে কবিতা হয়ে
অসীম শূন্যতার সীমাহীন আকাশ হয়ে ওঠে। কবিতা আর লেখার মাধ্যমে এখনও প্রতিনিয়ত
জাতিকে সচেতন করার প্রয়াস প্রত্যেকটা লাইনে লক্ষণীয় :
আমরা সেই বিশ্বের সেরা বাঙ্গালি জাতি,
এসো কবি, শহীদ মিনারে যাই নিয়ে শ্রদ্ধার ঢালী।
লিয়াকত আলী ভালো একজন মানুষ। পরিচিতদের কাছে একজন
ভালো বন্ধু। রাজনীতিবিদ হয়েও তিনি
প্রচলিত রাজনীতির শঠতাকে ঘৃণা করেন। এমন এক
রাজনীতি প্রতিষ্ঠায় তিনি সংগ্রাম করে যাচ্ছেন, যেখানে সাধারণ মানুষই হবে রাজনীতির
মূল্য লক্ষ্য। তিনি শুধু সাহসী নন, প্রচণ্ড সাহসী। তিনি বলতে পারেন সাহসের সঙ্গে
সত্যটি, কে রাগ করল কিংবা খুশি হলো তাতে কিছু যায় আসে না। আসবেই বা কেন, তিনি তো
আর লোভী নন, পাওয়ার জন্য হন্যে হয়ে নেই হায়েনার মতো। তিনি মানুষ, জীবনকে
সুস্মিতভাবে ধারণ করে আছেন রক্তজবায় মিশে থাকা অদৃশ্য রক্তের মতো। এর মাধ্যমে
আশেপাশে যারা আছেন তাদের বিকশিত করা এবং তাদের সার্বিক কল্যাণে নিবেদিত থাকাই তার
প্রত্যয়। মানুষের প্রতি, মানুষের কল্যাণের প্রতি সতত সঞ্চরিত তাঁর আকুলতা :
কেন আমি এত বেশী অশান্ত!
কেন আমার এত আকুলতা। (কেন আমার এত আকুলতা)
কেন আমার এত আকুলতা। (কেন আমার এত আকুলতা)
চারিদিকে কত অবিচার, কত অত্যাচার, কত সীমাহীন
হাহাকার। এত প্রতিকূল অবস্থার মাঝেও তিনি হতাশ নন, নৈরাশ্য তাঁকে স্পর্শ করতে
পারেনি অতীতে, এখনও পারে না। তিনি সুন্দর আগামীর স্বপ্নে শুধু বিভোর নন, নিশ্চিত
প্রত্যাশী। তিনি বিশ্বাস করেন, একদিন সব বিঘ্ন চুরমার হয়ে যাবে, মানুষ মানবতার
প্রশান্ত ক্ষেত্রে সবুজ শস্য ক্ষেতের মতো বিদুর হয়ে উঠবে প্রানোচ্ছ্বল গানে। হেসে
উঠবে ধরণী বিশ্বভ্রাতৃত্বের সুমহান সুরে :
মানুষ তো ঠিকই পার হয়ে যাচ্ছে,
দুঃখ সুখের জল তরঙ্গের উপর পা ফেলে ফেলে
ধরনীর বিশাল এই জীবন নদী।
No comments:
Post a Comment