অমর একুশে গ্রন্থমেলায় অনেক হাজার বই প্রকাশিত হয়। এতগুলি বই থেকে আপনার প্রিয় শিশুকিশোর সন্তানের জন্য অতি কার্যকর ও শিক্ষামূলক বই খুঁজে বের করা কঠিন। হাজার হাজার বই থেকে আপনার শিশু ও কিশোরের অত্যন্ত উপযোগী তিনটা বইয়ে বিবরণ দিলাম। আপনার প্রিয় সন্তানকে আনন্দের সঙ্গে শিক্ষা ও জীবন গড়ার উপাদানে বিভূষিত করার জন্য বই তিনটি অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। বইতিনটির লেখক ড. মোহাম্মদ আমীন। প্রকাশক পুথিনিলয়, পাবেন, অমর একুশে গ্রন্থমেলায় পুথিনিলয়-এর স্টলে।
১. তিনে দুয়ে দশ
ভালোবাসা দিয়ে সবকিছু জয় করা যায়। ভালোবাসা দিয়ে যে কোনো কঠিন হৃদয়কেও বিগলিত করে ফেলা যায়।
ভালোবাসা পেলে যে কোনো দুষ্টমতি শিশুও সুবোধ হয়ে যায় সপ্রাণ চঞ্চলতায়। ভালোবাসা দিয়ে অতি অবাধ্য এবং লেখাপড়ায় প্রচ- অমনোযোগী শিক্ষার্থীর ইচ্ছাকেও প্রতিভায় প্রতিভায় বিকশিত করে তোলা যায়। ভালোবাসায় বারিত করা গেলে অতি বর্বর ব্যক্তিও আদর্শ মানুষে পরিণত হয়। মূলত এগুলিই উপন্যাসটির বিষয়বস্তু। মা-বাবা, দাদা-দাদি, নানা-নানি, প্রবীণ, সর্ব পর্যায়ের অগ্রজ, বস, শিক্ষক-শিক্ষিকা, সিনিয়র প্রমুখ-সহ যে কোনো গুরুজন, বন্ধু, সহপাঠি, প্রিয়জন ও ভালোবাসার মানুষকে যদি এমন কোনো বিশেষ উপহার দিতে চান, যে উপহার পেলে তিনি খুশি হবেন এবং উপহার দাতার প্রতি তার প্রেম-ভালোবাসা, মায়ামমতা, দয়া-দরদ, স্নেহ-প্রীতি, হার্দিক নৈকট্য, সহানুভূতি, ধৈর্য ও বিবেচনাবোধ বেড়ে যাবে; তাহলে, তাকে ‘তিনে দুয়ে দশ’ উপন্যাস উপহার প্রদানই হবে
সবচেয়ে উত্তম এবং কার্যকর। এটি হতে পারে যে কোনো দিবসে যে কোনো অনুষ্ঠানে যে কোনো বয়সের এবং যে কোনো সম্পর্কের প্রিয়জনকে দেওয়া শ্রেষ্ঠ উপহার। বেউ যদি একটি উপন্যাস পড়ে তার শিশু বা জুনিয়রদের নিজের ইচ্ছেমতো গড়ে তোলার কার্যকর কৌশল আয়ত্ত করতে চান তাহলেও বইটি পড়া অপরিহার্য।। এটি এমন একটি বই, যার সারাংশ ফেসবুকে প্রকাশিত হওয়ার পর বোদ্ধামহলে বিপুল সাড়া পড়ে গিয়েছিল। ভাইরাল আকারে ছড়িয়ে পড়েছিল এর ব্যতিক্রমতার কাহিনি। এটি একটি সর্বজনীন উপন্যাস। বইটি প্রত্যেকের হৃদয়কে নাড়া দিতে সক্ষম হবে। বইটি পড়লে হ্রাস পাবে অস্থিরতা, অধৈর্য এবং মানসিক বিপর্যয়। বইটির অন্তর্নিহিত শিক্ষা লালন করা গেলে যে কেউ অতি উচ্ছৃঙ্খল শিশুসন্তানকেও মনের মতো করে গড়ে তুলতে পারবে।
![]() |
ড. মোহাম্মদ আমীন |
৪. ভালোবাসা শুধুই ভালোবাসা
বইয়ের চেয়ে উত্তম উপহার এবং ভালোবাসার চেয়ে শ্রেষ্ঠ কাজ আর নেই। আর এই দুটির সমন্বয় যদি ঘটানো যায় তাহলে যে কারো জীবন হয়ে ওঠে মধুর এবং ভালোবাসাময়। জীবন হয়ে ওঠে স্বর্গীয় প্রাপ্তির চেয়ে আরো বিরল প্রত্যাশিত সুখের অনন্ত উৎস। প্রিয়জন প্রত্যেকের আছে, প্রত্যেকে চায় তার প্রিয়জন শ্রেষ্ঠ হোক কিন্তু নানা কারণে হয় না; করা যায় না। কিন্তু কেন করা যায় না এবং কীভাবে প্রিয়জনকে প্রত্যাশিত লক্ষ্যে উপনীত করা যায় এবং এতে
ভালোবাসার ভূমিকাই বা কী তা এই গল্পগ্রন্থের মূল আলেখ্য। প্রত্যেকের চাওয়া-পাওয়া এবং রুচি বা ইচ্ছা ব্যক্তিবিশেষে ভিন্ন। কিন্তু ভালোবাসার ক্ষেত্রে এবং বস্তু হিসেবে বইয়ের ক্ষেত্রে সবার ইচ্ছা অভিন্ন। ভালোবাসা পেলে যে ব্যক্তি খুশি হয় না সে পশুও নয়, জড়; মরা লাশ। বই পেয়ে যে আপ্লুত হয় না, সে লাশের চেয়েও বিরক্তিকর। তবে বই হতে হবে প্রিয়জনের মনকে নাড়া দেওয়ার মতো। ভালোবাসা শুধুই ভালোবাসা এমন একটি বই। এটি যে কোনো বয়সের এবং যে কোনো পর্যায়ের প্রিয়জনকে উপহার দেওয়া যায়। এটি এমন একটি বই যা প্রিয়জনকে দিলে আপনার প্রতি শুধু ভালোবাসা নয়, গভীর কৃতজ্ঞতার নিবিড় আবেশে বেড়ে যাবে পারস্পরিক প্রীতি। ভালোবাসার মূল্য কী এবং কীভাবে, কোথায় কাকে ভালোবাস দিতে হয় এবং কীভাবে তা স্থায়ী করা যায়- তা এই গল্পগ্রন্থের পাত্রপাত্রীদের আচরণ, কথোপকথন এবং কাহিনি বিন্যাসে মেলে ধরা হয়েছে। জীবন ও ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে অর্জিত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সহজ-সরল ভাষায় পরিবেশিত বইদুটি হতে পারে ভালোবাসা দিবস-সহ যে কোনো দিবসে যে কোনো অনুষ্ঠানে যে কোনো বয়সের এবং যে কোনো সম্পর্কের প্রিয়জনকে দেওয়া আপনার শ্রেষ্ঠ উপহার।
২. বড়ো হুজুর ও বরুমতির মেলা
শিশুকিশোর হতে যুবক-যুবতী এবং পরিণত বয়স্ক Ñ এককথায় সবার উপযোগী এই উপন্যাসটি একদিকে যেমন হৃদয়
বিদারক অন্যদিকে তেমনি প্রত্যশার বিরল স্নিগ্ধতা আর ভালোবাসা ও কাঠিন্যের বৈচিত্র্যময় উপমায় ভরপুর এক অতুলনীয় কিশোর উপন্যাস। বড়ো হুজুর, বরুমতি এবং বড়ো হুজুরের শিশু নাতিকে নিয়ে উপন্যাসটি রচিত। বরুমতি কোনো মেয়ে নয়। একটি খাল। বরুমতির তীরে প্রতিবছর চৈত্রসংক্রান্তিতে একদিনের জন্য হিন্দুদের মেলা বসত। অনেক শিশুকিশোর বরুমতির মেলায় যেত। কিন্তু বড়ো হুজুর তার নাতিকে যেতে দিতেন না। ঘরে আটকে রাখতেন। বড়ো হুজুর তার শিশু নাতির মেলায় যাওয়া রোধ করার জন্য কত নৃশংস হয়ে উঠতেন এবং কী জঘন্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতেন, অপরদিকে শিশুটি মেলায় যাওয়ার জন্য কী করতেন তার শোকাবহ ভাষাচিত্র বইটির মূল বিষয়বস্তু। এত গোঁড়া হওয়া সত্ত্বেও বড়ো হুজুর কত দেশপ্রেমিক এবং কীরূপ সমাজ সচেতন ছিলেন সেই বিষয়টিও উপন্যাসটিতে উঠে এসেছে। উপন্যাসটি তৎকালীন ধর্মীয় গোঁড়ামির নির্যাতনে পিষ্ঠ এক অসহায় শিশুর জীবনচরিতের একটি করুণ চিত্র। যে কারুণ্য আবার নির্যাতনকারীর স্নেহে অমিয় হয়ে উঠত হার্দিক মমতার পারিবারিক পরশে। এটি শুধু উপন্যাস নয়, যেন কালের পরিক্রমায় চলে আসা একটি জীবন্ত জীবনবন্দনা। যার গুরুত্ব ইতিহাসের চেয়েও অধিক। বইটি আপনার সংগ্রহকে করবে সমৃদ্ধ এবং চিন্তাকে করবে ঋদ্ধ।
No comments:
Post a Comment