Monday 22 January 2018

মেথর থেকে প্রফেসর / রাজীব আহমেদ

মেথর থেকে প্রফেসর কথাটি ড. মোহাম্মদ আমীন এর লেখা ‘যেখানেই থাক ভালো থেক গোপাল’ ‍উপন্যাসের সারাংশ। এটি একটি অসাধারণ মানবতাবাদী উপন্যাস এবং মানুষের প্রতি মানুষের বিরল ভালোবাসার একটি হৃদয়গ্রাহী দৃষ্টান্ত। প্রতিনিয়ত অসংখ্য প্রতিভা আমাদের চোখের আড়ালে ঝরে পড়ছে। কার মধ্যে কী প্রতিভা লুকিয়ে আছে জানা যায় না। তাই কাউকে অবহেলা করতে নেই। রাস্তার মধ্যে যে শিশুটি  ভিক্ষা করছে, সে হয়ত সামান্য সুযোগ পেলে হয়ে যেতে পারে অসামান্য কেউ। তাই আমাদের প্রত্যেকের উচিত প্রত্যেককে যথাসাধ্য সহায়তা করা। তাহলে পৃথিবী সত্যিকার সাফল্যে মুগ্ধকর ভালোবাসায় সপ্রাণ হয়ে ওঠবে। এবার দেখা যাক, ড. মোহাম্মদ আমীনের লেখা ‘যেখানেই থাক ভালো থেক গোপাল’ বইটির সংক্ষিপ্তসার।


মেথরের শিশুসন্তান গোপাল পিতৃহীন মায়ের নাম প্রভাতি। তিনি সেরাজুল হক নামের এক ধনী লোকের বাড়ির মেথর। প্রভাতির বড়ো ছেলে গাড়ি চাপা পড়ে মারা গিয়েছিল কয়েক বছর আগে। গাড়িতে চাপা পড়ার ভয়ে প্রভাতি গোপালকে গাছের সঙ্গে বেঁধে রেখে কাজ করেন প্রচণ্ড শীতে গোপাল চিৎকার করে কাঁদে, মশা কামড়ায়। যেখানে বেঁধে রাখা হয় সেখানে মলমূত্র ত্যাগ করে। সেরাজুল হক সাহেবের বাড়ির গৃহশিক্ষক গোপালের দুরবস্থা দেখে মর্মাহত হন। গোপালের কষ্ট তাকে অস্থির করে তোলে। একদিন ভোরে গৃহশিক্ষক শিশু গোপালকে শিকলমুক্ত নিজের রুমে নিয়ে আসেন এরপর থেকে প্রভাতি যতক্ষণ মেথরের কাজ করতেন গোপাল গৃহশিক্ষকের রুমে থাকত গৃহশিক্ষক, গোপালকে পড়াতে শুরু করেন কয়েক মাসের মধ্যে বুঝতে পারেন গোপাল অত্যন্ত মেধাবী। এতে তিনি গোপালের প্রতি আরো উৎসাহিত এবং সহানুভূতিশীল হয়ে ওঠেন।

গৃহশিক্ষক নিজ উদ্যোগে গোপালকে স্থানীয় নন্দীর হাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি করিয়ে দেন নিজের প্রচণ্ড অভাব সত্ত্বেও গোপালের যাবতীয় খরচ বহন করে  যেতে থাকেন  গোপাল হয়ে ওঠে গৃহশিক্ষকের অতি আদরের একজন। গোপালকে নিজের সন্তানের মতো তার লালন করে যাচ্ছিলেন গৃহশিক্ষক। গোপাল পঞ্চম শ্রেণিতে বৃত্তি পায়। এতে গৃহশিক্ষক আরো অনুপ্রাণিত হন। সপ্তম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার কয়েক দিন গৃহশিক্ষকের সরকারি চাকরিতে যোগদানের আদেশ আসে। গৃহশিক্ষক চাকরিতে যোগদান করেন কয়েক মাস গোপালের সঙ্গে চিঠিপত্রে যোগাযোগ থাকলেও নানা কারণে ধীরে ধীরে তা বন্ধ হয়ে যায়। শিশু গোপালের ইচ্ছা থাকলেও গৃহশিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করার কোনো উপায় ছিল না। আস্তে আস্তে গৃহশিক্ষক গোপালের কথা বহুলাংশে বিস্মৃত হয়ে যায়।

 ষোল বছর গৃহশিক্ষক পর জানতে পারেনগোপাল অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তি পেয়েছিল এসএসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষায়ও সে স্ট্যান্ড করেছিল বর্তমানে আমেরিকার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিজ্ঞানের প্রফেসর মেথরের ছেলে গোপাল কীভাবে প্রফেসর হলো তাই এই উপন্যাসের আলেখ্য বইটির প্রকাশক মাওলা ব্রাদার্স।

No comments:

Post a Comment